বেস্টফ্রেড যখন আদুরে বউ পর্ব_০২

এরপর বাসায় গিয়ে রেড়ি হয়ে বাবা আর আমি এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সানি, আয়মান কাওকে কিছু জানালাম না। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বাবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম দেশ ছেড়ে। অনেক কষ্ট হচ্ছিলো প্রিয় মানুষ গুলোর জন্য, কিন্তু আমি এখানে থাকলে হয়তো আরো বেশি কষ্ট পাবো।

যাওয়ার আগে নিজের ভার্চুয়াল জগৎ এর সব কিছু ডিলিট করে দিলাম। একটা নাম্বারও ওপেন রাখলাম না। সেখানে গিয়ে বেশ কিছু দিন মন খারাপ করে বসে ছিলাম। পরে নতুন বন্ধু, নতুন ক্যাম্পাস পেয়ে তন্নির কথা প্রায় ভুলেই গেলাম। আসতে আসতে ওখানকার পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলাম।

দেখতে দেখতে ২ বছর চলে গেলো, আমার পড়ালেখাও শেষ। চিন্তা করলাম এখানেই কোনো চাকরী করবো, কিন্তু সেটা আর হলো না। আব্বু আম্মু কল দিয়ে কান্নাকাটি করতেছে। আব্বুকে অনেক বার বলছি আমি এখানে চাকরি করবো বাট আব্বু বললো নিজেদের ব্যবসা দেখাশুনা করার জন্য। সেদিন রাতে বসে বসে ল্যাপটপ এ কিছু কাজ করছি এমন সময় বড় খালা আসলো (আমি বিদেশে বড় খালার কাছেই থাকি আর ওখান থেকেই পড়ালেখা করি) আমার রুমে, আমি খালাকে দেখে বললাম…

আমিঃ খালামনি ঘুমাও নি এখনো?

খালাঃ নারে বাবা ঘুম আসছে না। তুই কি করতেছিস?

আমিঃ কিছু না খালামনি, একটু কাজ করতেছি। কিছু বলবে?

খালাঃ হুম বাবা একটা কথা বলতাম যদি তুই অনুমিত দিস।

আমিঃ আরে কি আজব! আমার সাথে কথা বলার জন্য তোমাএ অনুমিত লাগবে নাকি? বলো কি বলবে।

খালাঃ দেখ বাবা আমার কোনো সন্তান নেই, তুই আমার নিজের সন্তানের মতোই। তুই যেদিন এখানে এসেছিলি আমি যে কি পরিমাণ খুশি হইছি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। আমি ভাবছি তোকে আমি সারাজীবন আমার কাছেই রেখে দিবো কিন্তু সেটাতো অসম্ভব।

আমিঃ কেন অসম্ভব? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। আর তোমার সন্তান নেই কে বলেছে আমিই তোমার সন্তান।

খালাঃ কাল রাতে তোর আম্মু কল করেছিলো।

আমিঃ হুম, কি বলেছে?

খালাঃ অনেক অসুস্থ, সারা দিন বাসায় থাকতে থাকতে ওর অনেক কষ্ট হয়। তোর বাবাও বাইরে বাইরে থাকে। তাই আমি বলছিলাম কি! তুই দেশে ফিরে যা। তোর মায়ের কাছে থাক। আর একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে ফেল। তোর মা বাবাও অনেক খুশি হবে।

আমিঃ খালামনি সব কিছু ঠিক আছে বাট আমি দেশেও যাচ্ছি না এন্ড বিয়েতো ইম্পসিবল।

এরপর খালামনি আমার হাত ধরে বললো….

খালাঃ প্লিজ বাবা এমন করিস না। তোর মা বাবার কথা একবার চিন্তা কর। ওদের কি ইচ্ছে করেনা ছেলের বউ এর সাথে সময় কাটাতে, নাতিদের সাথে একটু খেলা করতে। প্লিজ বাবা তুই দেশে ফিরে যা। প্রয়োজন এ মাঝে মাঝে এখানে আসিস। কিছদিন থাকবি ঘুরবি ভালো লাগবে। প্লিজ বাবা না করিস না।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে দেখি।

খালাঃ দেখি না, তুই কালকেই যাবি। এই নে টিকেট।

এ কথা বলে আমার হাতে একটা টিকেট ধরিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম…

আমিঃ খালামনি এটা কখন করলে?

খালাঃ তোর এতো কিছু জানার দরকার নেই, আর শুন আমি কিছু জিনিষ কিনে রেখেছি ওগুলো নিয়ে যাবি। এখন ঘুমা।

পরের দিন সব কিছু ঠিকঠাক করে খালামনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম দেশে। বাবা মা আগে থেকেই এয়ারপোর্ট এ ছিলো, আমাকে দেখেই কান্না শুরু করে দিলো।

মায়ের দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম, অনেক অসুস্থ, ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছে না। বাবার অবস্থাও আগের মতো নেই।

এরপর বাব আর মায়ের সাথে বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম। আগের সিমটা আবার ওপেন করলাম। কল আর মেসেজ এসে পুরো সিম ফুল হয়ে আছে। একটা জিনিষ দেখে খারাপ লাগলো। তন্নি একটি বার কলতো দূরের কথা একটা মেসেজও দেয়নি। হয়তো অনেক সুখে আছে। অনেক ভালো আছে, তাই আমাকে আর প্রয়োজন মনে করেনি। চোখের কোণে পানি এসে জমা হয়ে গেলো।

আমি সানির নাম্বারটাতে কল দিলাম, কয়েকবার দেওয়ার পর কল ধরেই সানি বলতে শুরু করলো….

সানিঃ কিরে তুই বাঁইচা আছিস?

আমিঃ কেন মরলে খুশি হতি নাকি?

সানিঃ এই সালা কথা বলবি না তুই। তোর সাথে কোনো কথা নাই। আমি তোর কেউ না।

আমিঃ প্লিজ ভাই রাগ করিস না। তোকে আমি সব কিছু বলবো।

সানিঃ কিচ্ছু বলতে হবে না তোর। তুই তোর মতো থাক।

আমিঃ আচ্ছা শুন বিকেলে কফিশপ এ আয়, তোদের সাথে দেখা করবো আর কিছু কথা আছে। আয়মান আর ফারিয়াকে একটু কষ্ট করে বলে দিস।

সানিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

একথা বলে কলটা কেটে দিলাম। বিকালবেলা বের হয়ে কফিশপের দিকে রওনা দিলাম। রাস্তাঘাট সব কিছু কেমন যেন চেইঞ্জ হয়ে গেছে।

একটু পর কফিশপে গেলাম গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। আজকেও আমার লেইট হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই ওরা দৌড় দিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে ফেলে। এরপর ৩ জনে মিলে ১০ মিনিট কিল আর ঘুসি দেয়

এতো দিনের জমানো সব গুলো একসাথে দিয়ে দেয়। ওদের সাথে কৌশল বিনিময় করলাম। তারপর সানিকে বললাম…

আমিঃ তো তোর আর কি অবস্থা? চাকরী বাকরি কিছু করিস নাকি?

সানিঃ হুম, একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে আমি আর ফারিয়া একসাথে জব করি।

আমিঃ গুড, আয়মান তুই কি করিস?

আয়মানঃ কি আর করবো! বাবার সাথেই আছি ব্যবসা নিয়ে। তো তুই কি করবি দেশে থাকবি নাকি আবার উধাও হয়ে যাবি?

আমিঃ আরে না, তোদের ছেড়ে আর যাচ্ছি না। তো তোর বউ কোথায়?

আয়মানঃ আরে আমি এখনো বিয়ে করিনি। তবে আব্বা ওনার বন্ধুর মেয়ের সাথে ঠিক করে রাখছে। ওর পড়ালেখা শেষ হলে তারপর বিয়ে।

আমিঃ আচ্ছা ভালো, তোদের দুজনের কি অবস্থা? (সানি আর ফারিয়াকে বললাম)

দেখি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতেছে। এরপর আয়মান বললো…

আয়মানঃ মামা ওরা নিজেরা নিজেরা সারাই ফেলছে!

আমিঃ কিহ! তোরাও এই কাজ করলি। যাক খুশি হলাম, সারাজীবন একসাথে ছিলি এখনও থাকবি। ভালো হইছে।

সানিঃ তো তুই কবে করছিস?

আমিঃ হা হা হা আমার মতো ছেলেকে কে মেয়ে দিবে বল?

ফারিয়াঃ ধুর ফাইজলামি করিস না।

আমিঃ এই তন্নি কেমন আছেরে? মনে হয় অনেক সুখে আছে তাই না?

একথা শুনার পর ওরা ৩ জন একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো, এরপর আয়মান বললো….

আয়মানঃ আসলে তন্নির বিয়ে হয়নি!

আমিঃ মানে! মস্করা করছিস তাই না? দেখ জোকস এখন ভালো লাগেন।

ফারিয়াঃ নারে, আয়মান ঠিক বলছে ওর বিয়ে হয়নি।

আমিঃ কি বলছিস তোরা? বিয়ে হয়নি কেন?

আয়মানঃ তুই তো সেদিন চলে গিয়েছিলি, তাহলে তুইও দেখতি কেন বিয়ে হয়নি।

আমিঃ এতো কথা না বলে বিয়ে কেন হয়নি সেটা বল।

আয়মানঃ আসলে রায়হান ছেলেটা অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো। বিয়ের দিন সে ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

আমিঃ তারপর!

আয়মানঃ তারপর আর কি ওরা বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়। তন্নির বাবা ওদের হাতেপায়ে ধরেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরে আমরা তোকে অনেক খুঁজেছি বাট তুইও চলে গেলি। তন্নির বাবা আমাকে অনেকবার বলেছে তন্নিকে বিয়ে করার জন্য বাট আমি করিনি। তোর কথা ভেবে, পরে তুই বুঝবি আমি আর তন্নি ছিট করে বিয়ে করেছি।

আমিঃ আরে ধুর এসব কেন বলছিস? আমি কিছু বলতাম না। তুই বিয়েটা করে ফেলতি।

আয়মানঃ না বন্ধু সেটা হয় না।

এরপর ফারিয়া বললো…

ফারিয়াঃ সেই থেকে তন্নি পাথরের মতো হয়ে গেছে, ঠিক মতো খায়না, ক্যাম্পাসে যায়না। আমাদের সাথেও মিশে না। দরকার ছাড়া কোনো কথা বলে না। সারা দিন জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।

আমিঃ ওর আর বিয়ের জন্য প্রপোজাল আসে নি?

সানিঃ আসছে বাট সে করবেনা। আমাদের বিয়ের সময়েও এসে গিফট টা দিয়ে চলে গেছে।

আমিঃ ওকি এখন এখানেই থাকে নাকি চলে গেছে।

ফারিয়াঃ না আগের বাসায় আছে।

আমিঃ আমি একটু ওর সাথে কথা বলবো। তোরা যাবি আমার সাথে?

আয়মানঃ আজকে তো সময় নেই, কালকে বিকালবেলা সবাই ফ্রি আছি। কালকে চল,,,

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।

এরপর ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতেছি ওর বাবা মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলে কেমন হয়? ইশ আমি যদি সেদিন থাকতাম হয়তো এতো দিনে আমাদের বাচ্ছাও বড় হয়ে যেতো। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমাই গেছি।

পরের দিন আমরা ৪ জন ওদের বাসায় গেলাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেলটা বাজালাম। একটু পর ওর মা এসে দরজা খুলে দেয়। আমাদের দেখে উনি অনেক খুশি হন।

আমাকে দেখে বলে “আরে মাহিন! তুই কোথায় থেকে আসলে? এতো দিন কোথায় ছিলে বাবা?

আমিঃ আন্টি আমি তো দেশে ছিলাম না।

আন্টিঃ ও আচ্ছা। এই দাঁড়িয়ে কেন আসো সবাই ভিতরে আসো।

এরপর আমরা সবাই ভিতরে গেলাম। অনেক বসে আন্টির সাথে গল্প করলাম। কিন্তু তন্নিকে কোথাও দেখছি না। আমি ফারিয়াকে ইশারায় বললাম তন্নিকে দেখতে সে উঠে তন্নির রুমে গেলো। গিয়ে অনেকক্ষণ পর আসলো। তারপর আমি বললাম…

আমিঃ কিরে ও বাসায় নেই?

ফারিয়াঃ হুম আছে, ভিতরে। এখানে নাকি আসবে না। তুই কথা বললে ভিতরে যা।

এরপর আমি উঠে ভিতরে গেলাম, গিয়ে দেখলাম ও জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি অনেকক্ষণ গিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে রইলাম, কেমন জানি নার্ভাস লাগছে।

কিন্তু ওর কোনো নড়াচড়া নাই। তারপর আমি একটা কাশি দিলাম। দেখলাম পেছনে তাকালো। এরপর সে বললো…..

তন্নিঃ কিরে কখন আসছিস?

আমিঃ এইতো কিছুক্ষণ হলো। কেমন আছিস তুই?

তন্নিঃ হুম ভালো। তুই এখানে কেন আসছিস?

কথাটা শুনে অনেক খারাপ লাগলো, এতোদিন পর দেখা হলো অথচ আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞেস না করে উলটো আমাকে বলে কেন আসছি।

এরপর আমি বললাম…

আমিঃ এখনো রাগ করে আছিস? সেদিনের জন্য আমি অনেক সরি।

তন্নিঃ আমি কারো উপর রাগ করিনা। সেই অধিকার আমার নেই। এতোদিন কোথায় ছিলি?

আমিঃ বাইরে।

তন্নিঃ তো এখন এখানে কেন আসছিস?

আমিঃ তোকে দেখতে।

তন্নিঃ দেখা হয়ে গেছে, এখন যা।

আমিঃ কেন তোর কি বিরক্ত লাগছে নাকি?

তন্নিঃ তুই রুম থেকে বের হলে আমি খুশি হবো। প্লিজ এখান থেকে যা।

আমি আর কিছু না বলে সোজা চলে আসলাম। এক রকম অপমানিত হয়ে। এরপর আন্টি নাস্তা নিয়ে আসলো। আমরা নাস্তা খেতে খেতে কথা বলছি। এরপর আমি আন্টিকে বললাম….

আমিঃ আন্টি একটা কথা বলতাম যদি কিছু মনে না করেন?

আন্টিঃ হুম বাবা বলো।

আমিঃ আন্টি আমি তন্নিকে বিয়ে করতে চাই!

আমার কথা শুনে আয়মান, সানি আর ফারিয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আন্টি বললো….

আন্টিঃ কিন্তু বাবা তোমার মা বাবা কি রাজি হবে? আর তন্নির তো বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই বলতেছে।

আমিঃ আন্টি আমার মা বাবা আমার উপর কোনো কথা বলবে না। আপনি যদি রাজি থাকেন আমি তন্নিকে বিয়ে করবো।

আন্টিঃ বাবা ঠিক আছে, কিন্তু তন্নি…

আমিঃ আন্টি বিয়ের পর সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আন্টিঃ আচ্ছা বাবা দেখি কি করা যায়!

এরপরেই তো…..


More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *