কসমেটিকস এর দোকানে যাওয়ার পর আমি আর আদিবা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখানে গিয়ে বিশাল আকারের একটা শকট খেলাম, দেখলাম তন্নিও সেখানে তার বান্ধবীদের সাথে কি যেন কিনতেছে।
আমাকে আদিবার সাথে দেখে আমার সামনে এসে বলে….
তন্নিঃ মেয়েটা কে?
আমিঃ ও আমার…
পুরাটা বলার আগেই আমার গালে ঠাসসস, একটা চড় বসিয়ে চোখ মুখ লাল করে কাঁদতে কাঁদতে দোকান থেকে বের হয়ে গেলো। তন্নির কয়েকটা বান্ধবি এসে আমাকে বললো….
বান্ধবীঃ ছি! ভাইয়া বাসায় বৌ রেখে বাইরে মেয়ে নিয়ে ঘুরেন আপনার লজ্জা করে না?
তারপর সবাই দোকান থেকে বের হয়ে গেলো। লজ্জায় আমার পুরো মুখ লাল হয়ে গেলো, খারাপটাই সবাই দেখলো, আসল কাহিনী টা কারো চোখে পড়লো না।
তারপর আমি আর আদিবাও বের হয়ে গেলাম, আদিবা আমাকে বললো…
আদিবাঃ সরি স্যার আমার জন্য আজকে আপনাকে অপমানিত হয়ে হয়েছে।
আমিঃ আরে ধুর! এগুলো কিচ্ছু না। তোমার কি দোষ, কেউ তো আসল কথা যানে না, সেজন্য রিয়েক্ট করতেছে।
আদিবাঃ মেডাম কিন্তু অনেক রাগ করছে।
আমিঃ এটা কোনো সমস্যা না, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আদিবাঃ স্যার একটা কথা বলতাম!
আমিঃ হুম বলো।
আদিবাঃ মেডামের নাম্বার টা আমাকে দিবেন? আমি সব বুঝিয়ে বলবো।
আমিঃ আরে তুমি কল দিলে সে আরো বেশি রিয়েক্ট করবে, উল্টো তোমাকে অপমান করবে।
আদিবাঃ সমস্যা নেই স্যার আপনি নাম্বার টা আমাকে দেন। আর এটা ধরেন (একটা ব্যাগ)
আমিঃ কি এটাতে?
আদিবাঃ স্যার আপনাদের বিয়েতে তো যেতে পারিনি, তাই মেডামের জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা গিফট।
আমিঃ তুমি আবার এটা কখন কিনলে?
আদিবাঃ সেটা আপনার না জানলেও চলবে। আপনি এটা নেন আর নাম্বার টা দেন।
আমিঃ ধন্যবাদ, এই নাও নাম্বার।
তারপর আমি নাম্বারটা দিয়ে দিলাম, গিফট টা নিয়ে আদিবা কে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম।
এসে গিফট টা খুলে দেখলাম একটা নীল শাড়ি, অনেক সুন্দর তন্নিকে অসাধারণ লাগবে। এরপর আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো ফারিয়াকে কল দিয়ে সব কিছু বলে দিই, কারণ তন্নি আজকের বিষয় টা ফারিয়ার সাথে শেয়ার করবে।
আমি ফারিয়াকে কল দিয়ে সব কিছু বলে দিছি এবং এটাও বলে দিয়েছি যে এমন ভাবে কথা বলবে যেন তন্নির প্রচুর রাগ হয়।
বাসায় একা একা ভালো লাগছে না, আব্বু আম্মুও নাই, তন্নিও নাই। আমি তন্নিকে কল দিলাম বাট নাম্বার বন্ধ। এরপর তন্নির আম্মুর কাছে কল দিলাম…
আমিঃ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
শাশুড়িঃ ওয়ালাইকুম সালাম, বাবা কেমন আছো?
আমিঃ জি ভালো, আপনি?
শাশুড়িঃ আছি মোটামুটি।
আমিঃ তন্নি কোথায়? ওর নাম্বার বন্ধ কেন?
শাশুড়িঃ কি জানি বাবা বিকালে কোথায় থেকে কাঁদতে কাঁদতে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকবার ডেকেছি, দরজা খুলছে না। কিছু খাচ্ছেও না। তোমার সাথে কি কিছু হয়েছে?
আমিঃ না আমার সাথে কিছু হয়নি।
শাশুড়িঃ তো বাবা আজকে আমাদের বাসায় আসবে না?
আমিঃ না আজকে আসবো না।
শাশুড়িঃ কেন বাবা? বাসায় তো কেউ নেই, এখানে তন্নিও একা চলে আসো।
আমিঃ না একটু কাজ আছে। আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকবেন, পরে কথা হবে।
এ কথা বলে আমি কলটা কেটে দিলাম, মনে মনে চিন্তা করলাম তন্নিও হয়তো আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে, না হলে এতো রিয়েক্ট করতো না। আয়মানের বুদ্ধি টা অনেক কাজে লাগছে।
এভাবে কয়েকটা দিন চলে গেলো, আমি তন্নিদের বাসায় যাই না। মাঝে মাঝে ওর মায়ের সাথে একটু একটু কথা হয়। প্রায় ১০ দিন পর ওর মা আমাকে কল দেয়, তখন আমি অফিসে ছিলাম….
আমিঃ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
শাশুড়িঃ ওয়ালাইকুম সালাম, বাবা কেমন আছো?
আমিঃ ভালো, আপনারা?
শাশুড়িঃ আছি সবাই ভালো। বাবা তুমি একটু আজকে আমাদের বাসায় আসতে পারবে?
আমিঃ আসলে আমার তো একটু কাজ ছিলো, কেন কোনো সমস্যা হইছে নাকি?
শাশুড়িঃ আসলে হইছে কি আমার বড় বোন নাকি অনেক অসুস্থ আমি আর তোমার শ্বশুর আব্বা ওখানে যাচ্ছি। তাই যদি তুমি এখানে থাকতে ভালো হতো।
আমিঃ তন্নিকেও নিয়ে যান তাহলে।
শাশুড়িঃ ও যেতে চাচ্ছে না, সেজন্যইতো আমরা একটু টেনশন এ আছি। সে একা একা বাসায় কিভাবে থাকবে, যদি তুমি আসতে ভালো হতো।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আপনারা যান। আমি সন্ধ্যার সময় আসবো।
একথা বলে কলটা কেটে দিলাম, কেমন জানি খুব খারাপ লাগছে আজকে অনেক দিন পর ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
রাত প্রায় ৮.০০ টার সময় ওদের বাসায় গেলাম, কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো, মনে হয় আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। ভিতরে গেলাম, দেখলাম চোখ মুখ লাল করে বসে আছে, দেখতে বাচ্ছাদের মতো লাগছে, তারপর আমি বললাম..
আমিঃ কেমন আছিস?
তন্নিঃ তুই এখানে কেন আসছিস?
আমিঃ আম্মা বলেছে তাই।
তন্নিঃ লজ্জা করে না, অন্য মেয়েদের সাথে ঘুরে এখন এখানে আসতে?
আমিঃ সেটা আমার ব্যাপার, আমি তো তোর কেউ না, আমাকে নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যাথা কেন?
তন্নিঃ তোর মতো ফালতুকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে। আগে জানলে জীবনেও কবুল বলতাম না।
আমিঃ আমার মাথা গরম করবি না।
তন্নিঃ কি করবি তুই?
রাগে আমার পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে, আমি কোনো কথা না বলে ব্যাগ টা রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি তন্নি নেই, মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।
আমি আর ওর রুমে গেলাম না, সামনে গেস্ট রুমের সোফায় শুয়ে রইলাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। একটু পর আস্তে আস্তে উঠে তন্নির রুমের দিকে গেলাম, দেখলাম ও ঘুমিয়ে আছে। অনেকক্ষণ আমি বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ও কে দেখলাম।
হঠ্যাৎ করেই খেয়াল করলাম ওর পুরো শরীর কাঁপতেছে। আমি তাড়াতাড়ি রুমে গেলাম কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছে।
আমি তো টেনশন এ পড়ে গেলাম, কি করবো বুঝতে পারতেছি না, পরে কিচেন রুম থেকে একটা বাটি নিয়ে এসে ওর মাথায় জ্বলপট্টি দিলাম অনেকক্ষণ কিন্তু কিছুতেই কমছে না।
পরে একটা বালতিতে পানি নিয়ে এসে ওর মাথায় দিলাম, প্রায় ২ ঘন্টার মতো পানি দেওয়ার পর জ্বর কিছুটা কমলো, পরে দেখলাম পানি দিতে দিতে ওর শরীরও ভিজিয়ে দিলাম। এখন কাপড় টা চেইঞ্জ করতে হবে বাট কিভাবে করবো বুঝতে পারছি না। সে যদি দেখে আমি ওর কাপড় চেইঞ্জ করছি তাহলে আমার অবস্থা শেষ।
সকালবেলা আমি নাস্তা নিয়ে ওর রুমে গেলাম, দেখলাম সে মাত্র ঘুম থেকে উঠছে, আমার হাতে নাস্তা দেখে চমকে উঠলো, তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে যে ওর গায়ে যেই জামাটা ছিলো সেটা আর নেই আরেক টা , তারপর আমার দিকে রাগে চোখ মুখ লাল করে উঠে এসে আমার কলার ধরলো….
তন্নিঃ ওই কুত্তা আমার কাপড়ের এই অবস্থা করছে কে?
আমিঃ আসলে কালকে রাতে……
পুরোটা বলার আগেই ঠাসসস ঠাসসস, ২ টা চড় বসিয়ে দেয়। তারপর বলে….
তন্নিঃ তুই এতো খারাপ আমি ভাবতেও পারিনি, আমাকে ঘুমের মধ্যে পেয়ে তুই ছি! আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগে। তোকে আমি আস্তে আস্তে বিশ্বাস করতে লাগলাম কিন্তু তুই এতো খারাপ আমি জীবনেও ভাবিনি। যা বেরিয়ে যা এখান থেকে।
আমিঃ প্লিজ আমার কথাটা শোন।
তন্নিঃ তুই যাবি নাকি আবার চড় খাবি?
আমি আর কিছু না বলে নাস্তার প্লেট টা রেখে চলে আসতে যাবো এমন সময় দেখি দরজারসামনে নিলা (তন্নির চাচাতো বোন) দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয় আমাকে চড় মারার দৃশ্যটা দেখে ফেলেছে। লজ্জায় পুরো লাল হয়ে গেলাম।
কিছু না বলে সোজা রুমের বাইরে চলে আসলাম এরপর নিলা ভিতরে গেলো, যাওয়ার পর বললো…
নিলাঃ তুই উনাকে চড় মেরেছিস কেন?
তন্নিঃ ভালো করেছি, ও আমার কাপড় চেইঞ্জ করছে কেন?
নিলাঃ সে করেনি আমি করছি।
তন্নিঃ মানে?
নিলাঃ তুই জানিস কালকে রাতে তোর অনেক জ্বর আসছিলো, উনিই তোর মাথায় জ্বলপট্টি দিয়েছে, জ্বর না কমার কারণে সারা রাত তোর মাথায় পানি দেয়। পানি গুলো তোর শরীরে গিয়ে পুরো শরীর ভিজে যায়, ঠান্ডা লেগে যাবে সেজন্যে সকাল সকাল আমাকে কল দিয়ে আনে, আর আমিই তোর কাপড় চেইঞ্জ করি। আর তুই কিনা না জেনেই ওনাকে চড় দিলি? তোর ভাগ্য অনেক ভালো যে উনার মতো স্বামী পেয়েছিস।
এ কথা গুলো বলে নিলা বাইরে চলে আসে, আমি তন্নির মা কে কল করে ওর অসুস্থতার কাথা জানালাম তারপর কিছু না বলে সোজা অফিসে চলে গেলাম।
এরপর থেকে তন্নিকে আর কোনো কল দিই না, ওর আম্মুকেও দিই মাঝে মাঝে ওর আম্মু কল দিয়ে খবর নেই, জাস্ট এতোটুকুই।
কয়েকদিন পর বাবা মা চলে আসে, এসে আমাকে বলে….
বাবাঃ কিরে বৌমা কই?
আমিঃ ওর বাপের বাড়ি।
বাবাঃ তা তুই কি এতো দিন ওখানে ছিলি?
আমিঃ না, মাঝে মাঝে যেতাম।
বাবাঃ চুপ কর বেয়াদব! তুই কি ভাবছিস আমি কোনো খবর রাখি না? ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরতে তোর লজ্জা করে না? বউমা আমাকে সব কিছু জানিয়েছে।
বাহ! ফকিন্নি নিজের দোষ না স্বীকার না করে আমাকেই ফাঁসিয়ে দিলো, জানি বাবা এখন সত্য কথা বললে বিশ্বাস করবে না। তাই বলেও কোনো লাভ নেই, এরপর বাবা বললেন…
বাবাঃ এখন ওদের বাসায় যা, আর তন্নিকে তোর সাথে করে নিয়ে আসবি।
আমিঃ কিন্তু বাবা এখন তো….(বলতে না দিয়ে)
বাবাঃ কোনো কিন্তু নই, যেটা বলছি সেটা।
আমিঃ এখন তো রাত হয়ে গেছে, এখন কিভাবে আনবো? কালকে সকালে নিয়ে আসলে হবে না?
বাবাঃ গর্দভ! এখন আনতে কে বলেছে, এখন তুই যাবি রাত থেকে কালকে সকালে চলে আসবি।
আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় বাবার দিকে খেয়াল করে দেখলাম রেগে আছে, আমি আর কিছু না বলে রেড়ি হয়ে ওদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
রাত প্রায় ৯.৩০ টা আমি ওদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কলিংবেল দেওয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো।
তারপরেই তো…..