বেস্টফ্রেড যখন আদুরে বউ পর্ব_০৮

আমাদের একসাথে দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠলো, দেখলাম হাতে একটা টিফিন বাটি, মনে হয় দুপুরের খাওয়ার নিয়ে আসছে, ধুর সালার কেন যে আদিবাকে ফাইলটার কথা বললাম, যদি না বললাম তাহলে তন্নি হয়তো কিছু দেখতো না। আমি আদিবাকে ছেড়ে দিলাম। তন্নি রাগে চোখ মুখ লাল করে আমাকে বললো…

তন্নিঃ ছি! তুই এতো খা*রাপ?

আমিঃ প্লিজ তুই শান্ত হ, আমার কথা শোন।

তন্নিঃ কি শুনবো? নিজের চোখেই তো সব কিছু দেখলাম।

আমিঃ প্লিজ তুই আমার কথাটা শোন।

তন্নিঃ চুপ কর, তোর মতো ফা*লতুর সাথে আমি কোনো কথাই বলবো না। ভেবেছিলাম তুই সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস। আমিও আস্তে আস্তে তোকে ভালোবেসে ফেললাম, কিন্তু তুই অন্য মেয়ের সাথে ছিহ! আমার ভাবিতেই কেমন লাগে।

আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় আদিবা বললো…

আদিবাঃ ম্যাম শোনেন আপনার ধারনা ভুল।

তন্নিঃ তুমি চুপ করো, লজ্জা করেনা। অন্যের স্বামীর সাথে এসব করতে? যতসব ফালতু।

আদিবাঃ ম্যাম আপনি আমাকে যা ইচ্ছা বলতে পারেন। কিন্তু স্যারকে কিছু বলবেন না। স্যারের কোনো দোষ নেই।

তন্নিঃ চুপ করো তুমি, সেদিন তো শপিং করতেও দেখেছি তোমাদের। আবার বড় বড় কথা বলছো, ল*জ্জা করে না।

আদিবাঃ ম্যাম, আপনাকে সেদিন রাতে আমি অনেক বার কল দিয়েছি সত্যিটা বলার জন্য বাট আপনি কল ধরেন নি। সেদিন আমি স্যারকে জোর করেই শপিং করতে নিয়ে গেছি, আসলে এখানে আমার কেউই নেই, স্যারকে ভাই ডেকেছি। একটা কাজিনের বিয়ে ছিলো, প্রায় ৬ মাস পর বাড়ি যাচ্ছি তাই বাবা মায়ের জন্য কিছু জিনিষ কিনতে গেছিলাম। আর আপনি সেখানে আমাদের দেখে পেলেন। স্যারকে সবার সামনে চড় দেন। যানেন সেদিন আপনার জন্য একটা নীল শাড়ি আমি কিনেছিলাম। স্যার অনেক বার বলেছিলো আপনাকে নাকি নীল শাড়ীতে ভালো মানায়। আপনাদের বিয়েতে না যেতে পারায় একটা নীল শাড়ী আমি আপনার জন্য কিনে স্যার কে দিয়েছিলাম। বিনিময়ে আপনি স্যারকে চড় দিয়েছেন নয়তো অপমান করেছেন।

তন্নিঃ সেদিনের কথা বাদ দাও, আজকের টা তো আমি নিজের চোখেই দেখলাম, আজকে কি ছিলো তাহলে?

আদিবাঃ আমার একজনের সাথে রিলেশন আছে, বাবা ছাইছে তাকে বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য, আমি স্যারের কাছে এসেছি বিকালবেলা ছুটি দেওয়ার জন্য। স্যার আমাকে ছুটি দিয়েছে। আমি চলে যাওয়ার সময় স্যার ফাইলটা দিতে বললেন, আমি ফাইলটা নিতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম এমন সময় স্যার আমাকে ধরে ফেললেন।

তন্নিঃ………..(চুপ করে আছে)

আদিবাঃ শুনেন একটা কথা বলি, আপনার কপাল অনেক ভালো যে আপনি উনার মতো একজনকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন। আপনার মতো মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেই উনার সাথে থাকার। নিজেকে তো অনেক কিছু মনে করেন। এগুলো বাদ দিয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করুন।

আদিবা একথা গুলো তন্নিকে বলে চলে গেলো, দেখলাম তন্নির চোখে পানি চলে আসছে। আমি এতোক্ষণ কিছুই বললাম না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে দুজনের কথা শুনছিলাম, আদিবার কথা গুলো অনেক ভালো লাগলো, মনে মনে কয়েকবার ধন্যবাদ জানালাম।

একটু পর তন্নি আমার দিকে তাকালো, চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, তারপর আমাকে বললো…

তন্নিঃ নিজেকে খুব চালাক মনে করিস তাই না?

আমিঃ মানে! (অবাক হয়ে)

তন্নিঃ তুই কি ভাবছিস আমি কিছুই জানি না?

আমিঃ কি জানিস তুই?

তন্নিঃ এই যে এতোদিন অবহেলার নাটক করেছিস, আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস। নিজেকে হিরো ভাবছিস?

মনে মনে ভাবলাম তন্নিকে এগুলো আবার কে বলে দিছে, সালা আয়মাইন্না বলে দিলো নাকি? এরপর আমি বললাম…

আমিঃ এগুলো সব মিথ্যা কথা, আমি যা করেছি মন থেকে করেছি। তোকে এই কথা গুলো কে বলেছে?

তন্নিঃ তুই কি ভাবছিস, ওরা শুধু তোর ফ্রেন্ড আমার ফ্রেন্ড না? ফারিয়া আমাকে সব কিছু বলেছে।

সা*লার মেয়েদের পেটে কিছুই হজম হয় না, কি দরকার ছিলো তন্নিকে এগুলো বলার? তারপর আমি বললাম…

আমিঃ তোকে এই কথা গুলো ফারিয়া বলেছে? দেখ ওর কি হাল করি।

তন্নিঃ কি করবি তুই ফারিয়ার

এ কথা বলে আস্তে আস্তে এগুতে লাগলো, আমি বললাম…

আমিঃ কি ব্যাপার তুই এদিকে কেন আসছিস?

তন্নিঃ কেন আসছি তাই না? (আরো এগিয়ে এসে)

আমিঃ দেখ একদম কাছে আসবি না। আমি। কিন্তু চিল্লাচিল্লি করবো।

তন্নিঃ কর চিল্লাচিল্লি, দেখি কে আসে? (আমার কলার ধরে)

আমি পিছাইতে পিছাইতে দেওয়ালের সাথে লেগে গেছি…

আমিঃ এই কি করছিস তু…….

বলার আগেই ঠোট দিয়ে আমার ঠোট চেপে ধরলো, আমার পুরো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো, কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর আমি তন্নিকে একটু দূরে সরিয়ে দিলাম। বললাম…

আমিঃ এই তুই কি পাগল! এটা আমার অফিস। বেডরুম না, যদি কেউ দেখে ফেলতো।

তন্নিঃ দেখুক তাতে আমার কি?

আমিঃ খাইছিস?

তন্নিঃ হুম মাত্রইতো খাইলাম।

আমিঃ আরে ধুর এটা না, দুপুরে খাইছিস?

তন্নিঃ না, তোর জন্য রান্না করে নিয়ে আসছি।

আমিঃ তুই করছিস নাকি আম্মা করছে?

তন্নিঃ দুজনেই করছি, তুই এতো কথা বলিস কেন?

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। এক সাথে খাবো

তন্নিঃ ওকে।

এরপর তন্নি ওয়াশরুমে চলে গেলো, আমি মনে মনে ভাবছি অবশেষে তন্নি লাইনে আসলো, হা*রামী বন্ধু গুলা না থাকলে হয়তো কিছুই সম্ভব হতো না। একটু পর তন্নি বাইরে আসলো, আমি একটা প্লেটে ভাত দিয়ে তাকে বললাম….

আমিঃ এই ধর, খেয়ে নে।

তন্নিঃ আমি খাবো না (অভিমানের সূরে)

আমিঃ কি আজিব! তুই না একটু আগে বললি খাবি।

তন্নিঃ এভাবে খাবো না।

আমিঃ তো কিভাবে খাবি?

তন্নিঃ যদি কেউ একজন খাইয়ে দেয় তাহলে খাবো।

আমি আর কিছু না বলে ও কে খাইয়ে দিলাম, নিজেও খেয়ে নিলাম। খাওয়াদাওয়া শেষে তন্নিকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।
তন্নি চলে যাওয়ার পর ফাইলটা নিলাম এমন সময় আয়মানের কল….

আয়মানঃ দোস্ত কি অবস্থা?

আমিঃ আরে মামা! কি বুদ্ধি দিলি, তন্নি তো পুরো ফিদা হয়ে গেছে।

আয়মানঃ আরে কি বলিস?

আমিঃ হুম। আর তন্নির জন্মদিনে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি ভুলেই গেছিলাম ওর জন্ম দিন।

আয়মানঃ আরে মামা সারপ্রাইজ এর কি দেখলা, আরো বড় সারপ্রাইজ এখনো রয়ে গেছে।

আমিঃ আরে কি বলিস? কি সারপ্রাইজ তাড়াতাড়ি বল।

আয়মানঃ না এখন না, বিকালে কপিশপে আয়, বাকিরাও আসবে সবাইকে একসাথে বলবো।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

আয়মানঃ শোন আসার সময় তন্নিকে নিয়ে আসিস। আমি সানি আর ফারিয়াকে বলে দিচ্ছি।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

একথা বলে কল কেটে দিলাম, অফিস শেষ করে বিকালবেলা তন্নিকে বললাম রেড়ি হতে, সে রেড়ি হতে চলে গেলো।

আমিও ফ্রেশ হয়ে একটা কালো শার্ট পড়ে বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তন্নির জন্য। একটু পর তন্নিও আসলো। বাহ সেও কালো শাড়ি পড়ে আসলো, আমি দেখে আরো একবার ক্রাশ খেলাম, হা করে তাকিয়ে আছি।

একটু পর তন্নির ঝাঁকানিতে বাস্তবে ফিরে এলাম আমাকে বললো…

তন্নিঃ এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? মশা ঢুকবে।

আমিঃ আরে না, আমি একটা কথা চিন্তা করতেছিলাম।

তন্নিঃ কচু করছিলি, যা এখন রিক্সা নিয়ে আয়।

তারপর আমি একটা রিক্সা নিলাম। আমি একটু দূরে সরে বসতে চাইলাম কিন্তু আমার বাম হাতটা চেপে ধরে বসে আছে।

একটু পর কপিশপে পৌঁছে গেলাম, দেখলাম সবাই বসে আছে। আমাদের দেখে সবাই দাঁড়ালো। ফারিয়া বললো….

ফারিয়াঃ কিরে আজ এতো মেসিং, ঘটনা কি?

তন্নিঃ কিসের ঘটনা?

সানিঃ বুঝি বুঝি, সব বুঝি।

আমিঃ আচ্ছা বুঝলে ভালো।

আয়মানঃ এই হারামীর দল চুপ কর। সবাই আগে বস…

এরপর আমরা সবাই বসলাম, আয়মান সবার জন্য কফির অর্ডার দিলো।

আমিঃ বন্ধ এবার বল, কি এমন সারপ্রাইজ যেটা মোবাইলে বলা যায় না। এখানে বলতে হবে।

আয়মানঃ দোস্ত আমার তো বিয়ে?

সানিঃ সত্যি?

আয়মানঃ হুম সত্যি।

তারপর সবাই আয়মানকে congratulations জানালাম।
আমি বললাম….

আমিঃ তো বিয়ে কবে?

আয়মানঃ পরশু দিন।

সানিঃ হারামীর বা*চ্ছা আগে বলিস নি কেন?

আয়মানঃ দোস্ত আমি নিজেও জানতাম না, আজকে সকালে আব্বা বলছে। আচ্ছা শোন কালকে তোরা সবাই থাকবি। অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হবে।

আমিঃ আমি পারবো না, তোরা সবাই আসিস।

আয়মানঃ না পারলে তুই বিয়েতেও আসিস না। (রাগ করে)

আমিঃ ওরে ভাই কাঁদিস কেন? আচ্ছা ঠিক আছে আসবো।

আমার কথা শুনে সবাই হাসাহাসি করতে লাগলো, তারপর অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে কথাবার্তা বলে বাসায় চলে আসলাম।

আমি ফ্রেশ হয়ে বাবার সাথে কথা বলতেছি, তন্নি তখন ফ্রেশ হচ্ছিলো, অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে রুমে গেলাম। দেখলাম……

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *