বোনের বান্ধবী যখন রোমান্টিক বউ শেষ পর্ব

হঠাৎ

আমার সামনে একটা মেয়ে আসলো

রিভা : রিফাত না ( আমার বন্ধু রিভা । রিভা স্কুল লাইফের বন্ধু । SSC পরীক্ষার পর আংকেলের অন্যান্য জায়গার বদলি হয়ে যায় । তারপর পর থেকে রিভার দেখা হয়নি )

আমি : আরে রিভা তুই

রিভা : হুম কেমন আছিস

আমি : আমি ভালো আছি , তুই কেমন আছিস , আরে বস , দাঁড়িয়ে কেন
পরিচয় হয়ে নে ( পরিচয় করিয়ে দিলাম )

রিভা : নারে আমার একটু তাড়া আছে

আমি : আংকেল আন্টি কেমন আছে

রিভা : ভালো আছে , তোর সবাই কেমন আছে

আমি : হুম ভাল আছে , অনেক দিন পর দেখা হলো

রিভা : হুম , আচ্ছা আমি তাহলে যাই পরে কোন দিন কথা হবে , আর তোর নাম্বার টা দে

আমি : আচ্ছা ঠিক আছে , আর নাম্বার নে ০১৯৯৯৪১৬★★★

রিভা : আচ্ছা । ভালো থাকিস

তারপর রিভা চলে গেল
আর অপরদিকে এতক্ষণ মিম পুরো রেগে গেছে

মিম : বেটা আমার সাথে কথা বলতে ভয় পায় । আর রিভা নাকি টিভার সাথে কি সুন্দর করে কথা বলতেছে । কুত্তা মেয়ে দেখলেই লুচ্চামি শুরু করে দিয়েছে । তোকে তো আমি ছাড়বো না । কুত্তা বিড়াল ছাগল ভেড়া হাতি কুমির এনান্ডা আর আর কি যেন , মনে পরছে না ( মিম মনে মনে বলতেছে )

আপু : কিরে মিম তোর কি হয়েছে

মিম : কিছু না তোরা থাক । রিফাত চলত ওদিকে যাই , তোমার সাথে কিছু কথা আছে । ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আমি : ( এর আবার কি হলো , মুখ দিয়ে মধু বের হচ্ছে , না ব্যপারটা সুবিধার মনে হচ্ছে না , কথা আছে না , ” অতি ভক্তি চোরের লক্ষন ” , মনে মনে )
আলাদা করে কি বলার আছে এখানে বলো

আপু : না আমার ভাইটা দেখি ছোট আছে । আরে যেতে চাচ্ছে নিয়ে যা

আমি : আচ্ছা চল ( মিমকে )

তারপর মিম আর আমি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম

মিম : গাড়ি নিয়ে আয়

আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে এলাম । মিম গাড়িতে উঠে বসলো ।

মিম : গাড়ি সোজা নদীর পাড়ে নিয়ে যাবি ( তুই করে )

নদী পাড়ে এসে

আমি : তোমার কিছু হয়েছে

মিম : এতো কিছু করে বলতেছে কিছু হয়েছে

আমি : আমি আবার কি করলাম ( অবাক হয়ে )

মিম : কেন আমার সাথে কথা বলতে তোর ভালো লাগেনা , তুই ঐ রিভা নাকি টিভার সাথে এতো কিসের কথা আবার মোবাইল নাম্বার ও নিল

আমি : আরে ও আমার শুধু বন্ধু । অনেক দিন পর দেখা হলো তাই …….

মিম : বন্ধুর নিখুঁছি করি আমি

আমি : আরে এই জন্য রেগে যাওয়ার কি আছে

মিম : আচ্ছা , রাগ করবো না তাহলে কিসস কর

আমি: এ্যাাাা

মিম : এ্যাা নয় হ্যাঁ

আমি : পারবো না ( বলার সাথে সাথে মিম চার ঠোঁট এক করে দিল । পুরো ১০ মিনিট পর ছাড়লো ।

মিম : হ্যাঁ এবার আমার রাগ কমেছে

মিম : কে আছো গো আমার ইজ্জত লুটে নিয়ে গেল ( নেকা কান্না শুরু করে দিলাম )

মিম আবার ঠোঁট চেপে ধরলাম এবার ৫ মিনিট পর ছাড়লো

মিম : এবার নেকা কান্না শুরু করলে আবার কিসস করবো । ৩০ মিনিট পর ছাড়বো

আমি : না না না আমি কিছু বলবো না । আমি চুপ করে আছি । ( যে মেয়ে কোন বিশ্বাস নাই )

মিম : হুম এবার বাহিরে বের হও। একটু নদীর ধারে হাঁটব চলো

আমি : যথা আগগা মহারানী ।

তারপর দুজন দুজনের হাত ধরে হাঁটতে লাগলাম । মনের মধ্যে একটি শান্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে । আশেপাশে শুনশান নীরবতা কেন নেই শুধু আমরা দুজন ।

* কয়েকদিন পর ***

রাকিব : আন্টি আমি রাকিব বলতেছি ( ফোন করে আম্মুকে )

আম্মু : হ্যাঁ রাকিব বললো কেমন আছো

রাকিব : আপনি তাড়াতাড়ি আংকেল কে নিয়ে ………. হাসপাতালে আসুন

আম্মু : কি হয়েছে রাকিব ।‌ আর রিফাত কোথায় । রিফাত ঠিক আছে তো ( কান্না করতে )

রাকিব : আন্টি আপনি কান্না করেন না । রিফাত ঠিক আছে । আপনি আসুন
বলে রাকিব ফোন কেটে দিল ।

আব্বু আম্মু আর আপু হাসপাতালে চলে গেল ।

হাসপাতালে গিয়ে

আম্মু : রাকিব রিফাত কোথায়। আর এখানে এতো পুলিশ কেন

হিমেল ভাইয়া : আপনি আগে শান্ত হন । রিফাত ভিতরে আছে । রিফাত কে গুলি লেগেছে , অপারেশন রুমে আছে ।

আম্মু : ( হিমেল ভাইয়া এখানে আছে প্রথমে আম্মু খিয়াল করেনি ) হিমেল বাবা তুমি এখানে , রিফাতের গুলি লাগলো কিভাবে ( কান্না করতে করতে )

তখনি অপারেশন রুমে থেকে ডাক্তার বের হলেন

তারা ডাক্তার এর কাছে গেলেন

আম্মু আব্বু : আমার ছেলে ঠিক আছে তো , আমরা ওর কাছে যাবো

ডাক্তার : চিন্তা করার কিছু নেই সে এখন বিপদ মুক্ত । এখনি তাকে অন্য রুমে দেওয়া হবে । তাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে সকালে তার ঘুম ভেঙ্গে যাবে । আপনারা যেতে পারেন কিন্তু জোরে আওয়াজ করবেন না রুমে । ( বলে ডাক্তার চলে গেল )

আমাকে যখন অন্য রুমে দেওয়া হলো
আব্বু আম্মু রুমে গেল

অন্য দিকে আপু

আপু : এসব কি করে হলো

হিমেল ভাইয়া : এখন এসব কথা থাক

আপু : তুমি বলবে ( পুরো রেগে )

ভাইয়া : আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন কথা বলবে না

আপু : আচ্ছা

ভাইয়া : আসলে রিফাত একজন CID অফিসার । তুমি হয়তো জানো না । এমন কি তোমরা কেউ যানো না । আজকে একা একটা মিশনে গিয়েছিল । এবং রিফাত আহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে রাকিব কে ফোন করে । রাকিব আর রাফি তাড়াতাড়ি করে সে জায়গায় যায় । রাকিব আর রাফি ও CID অফিসার । রাকিব আর রাফি যাওয়ার আগেই রিফাতের বুকে একটা গুলি লাগে ।

আপু : রিফাত কতদিন থেকে CID তে আছে ।

ভাইয়া : একবছর ধরে

আপু : আব্বু আম্মুকে জানাবে না । ও সিআইডি পুলিশ । আব্বু আম্মুকে বলবে সন্ত্রাসীরা ভুল করে রিফাত কে মেরেছে । আর যারা আমার ভাইকে মেরেছে তাদের যেন কঠিন শাস্তি হয় ।

ভাইয়া : তোমার এই বিষয়ে ভাবতে হবে না । কারণ আজ রাতে তাদের শেষ দিন হবে । আচ্ছা তুমি ভিতরে যাও । আমি একটা কাজ শেষ করে ও আসতেছি ।

তোমার আপু আমার রুমে গেল । আপু নিজেকে কিছুটা শক্ত করে । আব্বু আম্মুকে শান্তনা দিতে লাগলো ।

আর অপর দিকে মিমের সাথে কালকে রাতে একটা সামান্য বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় । আর বিকেলে তার ভুল বুঝতে পারে । সাথে সাথে আমাকে কল দেয় কিন্তু আমাকে পায় না ।

অনেক বার দেওয়ার পর যখন পায় না তখনি

আপু ফোন করে

মিম : এই শোন না । রিফাতের সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছে । আমি কখন থেকে রিফাত কে ফোন দিচ্ছি কিন্তু ধরতেছে না । রিফাত কে বলে না আমার সাথে একটু কথা বলতে । আর কখনো এমন করবো না প্রমিজ করছি । ( কান্না করতে করতে , একনাগাড়ে বললো )

আপু : রিফাত কিভাবে ফোন ধরবে । ও তো হাসপাতালে , মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ( কান্না করতে করতে)

মিম : হাসপাতালে কি হয়েছে রিফাতের । আমার রিফাতের কিছু হতে পারে না । তুই মিথ্যা বলতেছিস । ( কান্না করতে করতে )

আপু : রিফাতের বুকে গুলি লাগছে । ডাক্তার তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে । অপারেশন চলতেছে । ………… হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে

মিম আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিল । আর আংকেল আন্টিকে না বলেই কান্না করতে করতে হাসপাতালে চলে যায় ।

আর আংকেল আন্টি চিন্তা করতে লাগলো মিম কান্না করতে করতে কোথায় গেল , যে মেয়ে না বলে কোথাও যায় না । সে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করা সত্বেও তাড়াহুড়ো করে কান্না করতে করতে কোথায় গেল

হাসপাতালে

মিম : রাকিব রিফাত কোথায় । কোথায় আছে রিফাত ( কান্না করতে করতে )

রাকিব : আসো আমার সাথে ।

মিম : কেমন আছেন এখন রিফাত , ঠিক হয়ে যাবে তো ( কান্না করতে করতে )

রাকিব : চিন্তা করো না আপু । রিফাত এখন ভালো আছে । কান্না বন্ধ কর ।

আব্বু আম্মু যখনি রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি

আব্বু : আরে মিম মা । কখন আসলে

মিম আপু : এই মাএ এলাম ( আর চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে )

আম্মু : আচ্ছা ভিতরে রিয়া আছে যাও ।

তারপর মিম রুমে ঢুকলো ।

মিম : এসব আমার জন্য হয়েছে । আমি যদি রিফাতের সাথে ঝগড়া না করতাম এসব কিছুই হতো না । এই রিফাত আর কখনো তোমার সাথে এরকম করবো না প্রমিজ করছি । একবার কথা । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রিফাত । একবার কথা বলো । তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো , এবার কথা বল ( কান্না করতে করতে )

আপু : মিম শান্ত হ । আর ডাক্তার বলেছে এখন রিফাত বিপদ মুক্ত । ওকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে । সকালের আগে ঘুম ভেংবে না।
( বিভিন্ন ভাবে মিমকে শান্তনা দিতে লাগলো আপু )

রাতে মিম আমার পাশে বসে আমার একটা হাত ধরে আছে

আংকেল : মিম এখন বাসায় চলো রাত হয়ে গেছে

মিম : না আমি কোথাও যাবো না । আমি এখানেই থাকবো

আম্মু : মিম মা আজকে যাও কালকে সকালে এসো ।

মিম : না আমি রিফাতের কাছে থাকো , আমি কোথাও যাবো না

আব্বু : বাসায় যাও আজকে , রাত জাগলে তোমার শরীর খারাপ করবে , রিফাতের কাছে তোমার আন্টি থাকবে ।

মিম : আন্টি রাত জাগলে অসুস্থ হয়ে পড়বে । তার চেয়ে আমি থাকি রিফাতের কাছে । আমার কিছু হবে না ।

( আংকেল আন্টি খবর নিয়ে জানতে পারে আমার গুলি লেগেছে , আর মিম আমার আছেই এসেছে । আমার খবর শুনে তারাও দেরি না করে হাসপাতালে চলে যায়। আর মিম এর কান্না করার কারণ আব্বু আম্মু , আংকেল আন্টি কেউ বুঝতে পারে না । তারপর আপু বলে যে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি । অনেক চেষ্টা করেও রাজি করাতে না পেরে মিমকে আমার সাথে হাসপাতালে থাকতে দেয় । আম্মু আর আপু থাকতে চেয়েছিল কিন্তু মিম জোর করে তাদের সকলকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় )

সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমি হাসপাতালে আর মিম আমার একটা হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে ।
একটু নড়তেই মিম জেগে গেল

মিম : তোমার জ্ঞান ফিরেছে । আমার একটু চোখ টা লেগে গিয়েছিল । তোমার কি কোন কষ্ট হচ্ছে । একটু ওয়েট কর আমি ডাক্তার কে ডাক দেই

আমি কিছু বলার আগেই মিম ডাক্তার কে ডাকতে চলে গেল
তারপর ডাক্তার এসে আমাকে দেখলো

ডাক্তার : এখন সব কিছু নরমাল আছে । ফুল একমাস একদম বেড রেস্ট নিতে হবে ।

আমি : আমি এখানে কিভাবে এলাম ডাক্তার

ডাক্তার : ( কালকে ঘটনা বলল )

মিম : ওকে কবে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো ।

ডাক্তার : তিনদিন পর নিয়ে যেতে পারবেন । আর ওনার খিয়াল রাখতে হবে ।
( বলে ডাক্তার চলে গেল )

মিম : আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ । আর কখনো তোমার সাথে রাগারাগী করবো না প্রমিজ । ( কান্না করতে করতে )

আমি : আরে কান্না করতেছো কেন । আমি কিছু মনে করি নি সত্যি ।
( এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম )
আচ্ছা তুমি এখানে একা আব্বু আম্মু আর আপু কই

মিম : আমি রাতে জোড় করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি ( রাতের ঘটনা খুলে বললো )

আমি : এমন করলে কেন । তাঁরা কি না কি ভাবে

মিম : যে যার ভাবার ভাবুক । আমার কিছু যায় এসে যায় না

আমি : হায় রে পাগল মেয়ে । সে নাকি আবার আমার বড়

মিম : হুম আমি শুধু তোমার পাগল

আপু : ভিতরে আসতে পারি

মিম আমার থেকে একটু সরে বসলো

আমি : আপু এখানে অনুমতি নেওয়ার কি আছে

আপু্ : না তোরা তো রোমান্স করতে বসেছিস তাই ( ঠুকতে ঠুকতে )

মিম : করতে দিলি কই । করার আগেই হাজির হলি ( বিরবির করে )

আপু : থাক আমার নামে গালাগালি দেওয়া বন্ধ কর ( মিমের দিকে তাকিয়ে )

তখনি হিমেল ভাইয়া এলো

ভাইয়া : রিফাত শরীর এখন কেমন

আমি : একদম পারফেক্ট । এই দুইদিন একটু রেস্ট নিতে হবে আর কি ।

মিম : শরীর পারফেক্ট মানে । তোরে আমি একমাস বিছানা থেকে নামতে দিমু না ( রেগে )

আব্বু আম্মু আর আংকেল আন্টি মিমের আব্বু আম্মু আর হিমেল ভাইয়ার আব্বু আম্মু ও এসেছে

আব্বু : আচ্ছা রিফাত তোমাকে গুলি লাগলো কিভাবে

আমি : আসলে কিভাবে লাগলো বুঝতে পারিনি । হঠাৎ করে পিছন থেকে কি যেন বুকে লাগলো । তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে যায়

আব্বু : ও

হিমেল ভাইয়া : আংকেল এসব কথা এখন বাদ দেন তো । আমি এই বিষয়ে দেখে নিব । চিন্তা করতে হবে না

হাসপাতালে আর তিন দিন ছিলাম আর আমার সাথে মিম ও ছিল । ওকে কোনো ভাবেই বাড়ি পাঠাতে পারিনি । মিম আমাকে খাইয়ে দেওয়া , যত্ন নেয়
আর আমাকে বাথরুমে ছাড়া ১৫ দিন বিছানা থেকে নামতে দেয় নি ।

আমাদের ভালোবাসাকে তাঁরা মেনে নেয় । আর আপুর বিয়ের পর আমাদের বিয়ে দিবে এটাই সিদ্ধান্ত নেয় । আনন্দ আর হাসি মজার মধ্যে দিন কাটতে লাগলো ।

★★★ সমাপ্ত ★★★

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *