অপরিচিতা মেয়ে যখন আদুরে বউ পর্ব_০২

আগামীকাল সকালেই ওনাকে বাসায় পাঠিয়ে দিবো।মনে মনে এসব ভেবে বাসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।তাও আবার অন্যের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে।কি কপাল আমার!দেখা যাক বাসায় গিয়ে কি হয়…..

অপরিচিতা মেয়েটাকে নিয়ে রাত দুইটা নাগাদ বাসায় এসে পৌঁছালাম।মনের মধ্যে খুব ভয় ভয় করছে।না জানি কোন বিপদে পড়ি।পার্কিং লটে বাইকটা পার্ক করে মেইন গেইটের সামনে আসলাম মেয়েটাকে নিয়ে।সে বেশ চুপচাপ আমাকে শুধু ফলো করে যাচ্ছে।কিন্তু এখন একটা বড় বিপদ সামনে আর সেটা হলো দারোয়ান চাচা।বেশ বয়স্ক আর অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ একজন মানুষ সে।আমাকে খুব পছন্দ এবং সম্মান করেন।সে যদি এই রাতে আমাকে একটা মেয়ে নিয়ে আসতে দেখে তাহলে আমার মান ইজ্জত তো যাবেই উল্টো কেলেংকারীও হতে পারে।

তাই মেয়েটাকে নিয়ে আড়ালে দাঁড়িয়ে ভাবছি কি করা যায়।মেয়েটা আমার দিকে যে আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছি।কোন আপদের পাল্লায় যে আজ পড়লাম!যাইহোক মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললাম…..

আমিঃশুনুন,সামনে দারোয়ান চাচা আছে সে আমাদের একসাথে দেখলে আমি নির্ঘাত তার চোখে খারাপ হয়ে যাবো তাই একটু চালাকি করে ভিতরে যেতে হবে।আমি ওনাকে কথার জালে ফাসিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাবো আপনি এই সুযোগে সোজা ওইযে সি ব্লক দেখছেন ওই বিল্ডিং এ ঢুকে পড়বেন।ঠিক আছে?

মেয়েটা একটু বিচলিত হলো।কিন্তু আচ্ছা বললো।

আমিও প্ল্যান মতো দারোয়ান চাচার কাছে গিয়ে এটা ওটার কথা বলে তাকে অন্য দিকে নিয়ে গেলাম আর এই সুযোগে মেয়েটা ভিতরে চলে আসলো।তারপর চাচার হাতে একশো টাকা দিয়ে বললাম চা খেতে।সে খুশি হলো।

আমি দ্রুত বাসার দিকে গেলাম।মেয়েটা নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো।তাকে নিয়ে লিফট এ উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।মেয়েটা লিফটের এক কোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ব্যাগ হাতে নিয়ে।আমি তার দিকে এক নজর তাকিয়ে মনে মনে বললাম…..

~ জীবনে নতুন এক এডভেন্চার হলো আজ এই মহিষীর জন্য।

লিফট দিয়ে সোজা সাত তলায় চলে আসলাম।এতোরাতে সবাই ঘুমাচ্ছে তাই ধরা খেলাম না কারো কাছে।আমি দ্রুত মেয়েটাকে নিয়ে আমার ফ্ল্যাটের সামনে এসে দরজা খুলে তাকে নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোজা সোফায় দুম করে বসে পড়ি।বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছিলো।

যদি একবার কারো কাছে ধরা খেতাম তাহলে আমি শেষ।এসিটা ছেড়ে পুরো নিজের শরীরটা ছেড়ে দিয়ে বসে আছি।বাসায় যে আরেকজন আছে তা যেনো ভুলেই গিয়েছিলাম কিছু মুহূর্তের জন্য।

কারন অনেক ক্লান্ত আমি।মেয়েটা আমার অবস্থা দেখে হালকা কাশি দিলো।তার কাশির শব্দ শুনে আমার হিতাহিত জ্ঞান ফিরে আসে।আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পাই।সে এখনো দরজার সামনে ব্যাগটা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে অসহায়ের মতো।আমি তো পুরো অবাক। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম…..

আমিঃএকি!আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?এখানে সোফায় এসে বসুন।আপনাকে পানি দিচ্ছি বসুন।

মেয়েটা আস্তে আস্তে ভয়ে ভয়ে ভিতরে এসে সোফায় বসে।আমি ফ্রিজ থেকে তাকে এক গ্লাস জুস এনে দিলাম কারন তার মুখ খুব শুকনো লাগছিলো।বোধহয় সারাদিনের না খাওয়া।সে জুস দেখে একটু অবাক হলো।হাবভাব দেখে মনে হলো আমাকে সন্দেহ করছে যে জুসে কিছু মিক্স করেছি কিনা৷আমি তার সামনে জুসটা রেখে বললাম…..

আমিঃআপনার যদি বিশ্বাস না হয় আমি খেয়ে দেখাতে পারি।আর শুনুন আমি ভালো ছেলে।আমার মধ্যে খারাপ কিছু নেই।থাকলে আপনার সাহায্য করতাম না।আপনি যদি বেশি সন্দেহ হয় তাহলে না খেলেও হবে।

মেয়েটাঃনা না খাচ্ছি আমি।

মেয়েটা এবার জুসের গ্লাসটা নিয়ে চুপচাপ পুরোটা এক ঢোকে খেয়ে নিলো।বুঝলাম তার ভালোই লেগেছে৷তার মায়াবী মুখখানা এখন অনেকটা উজ্জ্বল হয়েছে৷বোধহয় অনেক তৃষ্ণার্ত ছিলো।আমি বললাম…..

আমিঃআর এক গ্লাস দিবো?

মেয়েটাঃনা না ধন্যবাদ।আপনি সত্যিই অনেক ভালো।খুব তৃষ্ণা পেয়েছিলো।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।(কাঁদতে কাঁদতে)

মেয়েটার কথা শুনে মনে আলাদা একটা শান্তি অনুভব করলাম।কি মিষ্টি কণ্ঠ আর কি মিষ্টি দেখতে।মেয়েটার প্রেমিকটা কি হতভাগা যে এরকম একটা মানুষকে সে এক্সেপ্ট করলো না৷ ইসস!আমি তাকে বসিয়ে গেস্ট রুমে গেলাম।আমার ফ্ল্যাটটা বেশ বড়ই।দুইটা বড় বড় বেড রুম,একটা গেস্ট রুম,ডাইনিং আর ড্রইং রুম একসাথে,কিচেন আর তিনটা ওয়াশরুম আছে।দুইটা বেড রুমের সাথেই বিশাল বড় বড় বারান্দা আছে।আমি ঠিক করলাম গেস্ট রুমটায় আজ রাতটা মেয়েটাকে থাকতে দিবো৷মায়ের রুমে আমি নিজেই ঢুকিনা আর আমার রুমে তো প্রশ্নই আসে না।সো গেস্টের জন্য গেস্ট রুমই পার্ফেক্ট হবে।তাই আমি দ্রুত মেয়েটার জন্য রুমটা গুছিয়ে দিলাম।তারপর হলরুমে এসে তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম…..

আমিঃওই যে ওই গেস্ট রুমটায় আজ আপনি থাকবেন।এটা ওয়াশরুম,দরকার হলে ব্যবহার করতে পারেন।

মেয়েটা মাথা নিচু করে ধন্যবাদ বলে গেস্ট রুমে চলে গেলো।আমিও আমার রুমে এসে বাসার জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম।মনে মনে একটু ভয় করছিলো যে আবার আমাকে বাইরে থেকে আটকে দেয় কিনা তাই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।খুব ক্ষুধা লেগেছে তাই কিচেনে গিয়ে ফ্রাইড রাইস আর চিকেন ফ্রাই রান্না করলাম।বলতে গেলে আমি একজন পাকা রাঁধুনি।কারন তো আগেই বললাম,জীবনের অনেকটা সময়ই একা থেকেছি।দুটো প্লেটে খাবার নিলাম।একটা আমার জন্য আর একটা মেয়েটার জন্য।আচ্ছা সেই কখন থেকে মেয়ে মেয়েই করছি।তার নামটাই জানা হলো না।এখনই জানতে হবে।

আমি ডাইনিং রুমে খাবার রেখে গেস্ট রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা লাগানো।মনের মধ্যে খটকা লাগলো।কি ব্যাপার এই মেয়ে দরজা লাগালো কেন!কোনো উল্টা পাল্টা করছে নাতো আবার।আমি ঢোক গিলে আস্তে আস্তে রুমের সামনে গিয়ে দরজায় কান পাতলাম।কোনো সাড়াশব্দ নেই৷মনের মধ্যে অজানা ভয় বাসা বাঁধতে শুরু করলো।

আমি আরও ভালো করে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছি ওমনি হঠাৎই দরজা খুলে যায় আর আমি রীতিমতো মেয়েটার গায়ের উপর পড়ে যেতে নেই৷মেয়েটাও আমাকে এভাবে দেখে থতমত খেয়ে যায়।আমিও কোনো মতে নিজেকে সামলে অন্যদিকে সরে যাই।কিন্তু লজ্জায় মরে যাচ্ছি এখন।মেয়েটা দূরে সরে দাঁড়িয়ে ভীতু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে…..

মেয়েটাঃএই এই আপনি কি করছিলেন এখানে?কি মতলব আপনার হ্যাঁ?আপনি কি খারাপ কিছু করতে চাচ্ছেন?আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক আনবো।আল্লাহ আমাকে বাঁচাও…..

আমি অস্থির হয়ে তাকে শান্ত করার জন্য বলি….

আমিঃআরে আরে প্লিজ ভয় পাবেন না।আমি সত্যিই দুঃখিত।আপনি দরজা লাগিয়েছেন আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে আপনি কোনো উল্টা পাল্টা কিছু করেন কিনা।তাই কান পেতে শুনছিলাম ভিতরে কি করছিলেন।আচ্ছা কি করছিলেন আপনি দরজা দিয়ে?

আমি খেয়াল করলাম মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।আরও একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখি,আরে মেয়েটার পরনের ড্রেস তো চেইঞ্জ হয়েছে।সে শাড়ী পরে এসেছিলো কিন্তু এখন সে মিষ্টি কালারের একটা কামিজ পরে আছে।আমি সাথে সাথে বুঝে যাই যে সে কেন দরজা দিয়েছিলো।আমি আর কোন কিছু না ভেবে তাকে বলি….

আমিঃআমি এক্সট্রিমলি সরি।আমি বুঝতে পারিনি।সরি,প্লিজ আপনি আমাকে খারাপ ভাববেন না।আসলে মেয়ে মানুষের সাথে আমার অত উঠা বসা নেই তাই বুঝতে পারিনি।আমি সরি।

মেয়েটাঃআচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।

আমিঃআপনি প্লিজ খেতে আসুন,আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে।

মেয়েটা আমার সাথে খেতে আসে।আমি মনে মনে লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি।ছিঃ ছিঃ কি একটা কাজ করলাম!মান ইজ্জত সব শেষ।আমি আর মেয়েটার দিকে তাকালামই না লজ্জায়।চুপচাপ দুজন খাচ্ছি।হঠাৎ মেয়েটা বলে উঠলো….

মেয়েটাঃখাবারটা কে রান্না করেছে?

আমি মাথা উঠিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম….

আমিঃজ্বি আমি,কেন ভালো লাগেনি?

মেয়েটাঃকি!!আপনি রান্নাও পারেন?তাও আবার এতো মজা করে?

আমিঃহাহা।জ্বি পারি।মা শিখিয়েছে কিংবা বলতে পারেন জীবনের প্রয়োজনে শিখতে হয়েছে।আপনি রান্না পারেন?

মেয়েটা অসহায় ভঙ্গি করে মাথা নাড়িয়ে না বললো।আমি না হেসে আর পারলাম না।হাসতে হাসতে বললাম…..

আমিঃছেলেরা নিজেদের দরকারে রান্না করে কিন্তু মেয়েদের অবশ্যই রান্না করা জানতে হয়।নাহলে শ্বশুর বাড়ি গেলে বকাঝকা শুনতে হয়।হাহা….

আমি কথা শেষ করে মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখলাম মেয়েটার উজ্জ্বল মুখখানা মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে গেলো।আমি পুরো অবাক।রান্না শিখতে বলায় সে এতো কষ্ট পেলো!হায় হায়!আমি দ্রুত তাকে বললাম…..

আমিঃআহহা আপনি মাইন্ড করলেন?সরি সরি।আচ্ছা আপনার রান্না শিখতে হবে না।প্লিজ আপনি আমার কথায় কষ্ট নিয়েন না।

মেয়েটাঃনা না রান্নার জন্য কষ্ট পাইনি।আসলে কিছু একটা মনে পড়েছে তাই আরকি।

আমি শান্ত হয়ে বসলাম।আসলেই তো মেয়েটার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা।অবশ্য জেনেও বা কি হবে!সে শুধু আজ রাতের মেহমান।কাল সে তার ঠিকানায়।তবে এখন আপাতত তার নামটা জানা উচিৎ।আমি খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম…..

আমিঃআমাদের এতো কথা হলো অথচ আপনার নামটাই জানা হলো না।আপনার নামটা জানতে পারি?

মেয়েটাঃজ্বি অবশ্যই।আমার নাম জান্নাত,আপনার?

আমিঃরাশেদ।

জান্নাতঃসুন্দর নাম।

আমিঃআপনারও।

এরপর আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়।আমি সব গুছিয়ে হল রুমে এসে দেখি জান্নাত বসে আছে সোফাতে।আমি তার কাছে গিয়ে বললাম…..

আমিঃঅনেক রাত হয়েছে আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।কাল সকালে আবার রাজশাহী রওনা হবেন।সো এখন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন।

জান্নাতঃঠিক আছে।(মলিন কণ্ঠে)

জান্নাত উঠে চুপচাপ গেস্ট রুমে চলে গেলো।আমিও সব লাইট অফ করে আমার রুমে চলে গেলাম।রুমের দরজাটা আজ আটকে নিলাম। যদি রাতে আবার কিছু হয় তাই।আর সিকিউরিটিরও একটা ব্যাপার আছে।আমি খুব ক্লান্ত থাকায় দরজা লাগিয়ে বেডে গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে হারিয়ে যাই।

জান্নাতের কথা ভাবার মতো আমার শক্তি এখন নেই।বড্ড ক্লান্ত আমি।তাই সুখের ঘুম ঘুমাচ্ছি।কিন্তু এই সুখের ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়ীত্ব পেলো না।ঘুমের মধ্যে শুনছি কে যেনো আমার রুমের দরজায় নক করছে….

আধখোলা চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখি ঘড়িতে ৩ঃ৩৫ বাজে।দরজার ওপাড়ে কি জান্নাত নক করছে নাকি অন্য কেউ!অজানা এক ভয় কাজ করছে।আমি আস্তে আস্তে উঠে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম…..

চলবে…..

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *