অপরিচিতা মেয়ে যখন আদুরে বউ পর্ব_১২

আমি ইশারায় মুখে আঙুল দিয়ে তাকে চুপ থাকতে বললাম।ম্যানেজার সহ বাকিরা মুচকি হেসে দিলো আর জান্নাত লজ্জা পেলো।

তারপর ম্যানেজার সাহেব আমাদেরকে ভি আই পি টেবিলের দিকে নিয়ে গেলেন।আমরা বসলে ওয়েটার চলে আসে।আমি জান্নাতের কাছে মেনুটা দিয়ে বললাম…..

আমিঃআপনার যা যা খেতে…..

আমি জান্নাতকে আপনি বলায় ওয়াটার আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি তা দেখে দ্রুত কথা ঘুরিয়ে জান্নাতকে এই প্রথমবার তুমি করে বললাম।

আমিঃমানে তুমি যা যা খেতে চাও সব অর্ডার করো।কোনো সমস্যা নেই।

জান্নাত আমার মুখে প্রথমবার তুমি বলতে শুনে অবাক হয়ে তাকায়।অবশ্য জান্নাতের ভালোই লাগছিলো।কারন তুমি ডাকটায় অনেক আপন আপন একটা ভাব আছে।আমি ইশারায় দ্রুত অর্ডার করতে বললাম।জান্নাত অসহায় হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ওর মুখ দেখেই বুঝে গেলাম যে সে বুঝতে পারছে না আসলে কি অর্ডার করবে।আমি আমার মেনু থেকে দেখে দেখে ইউনিক কিছু বিদেশি খাবার অর্ডার করলাম যা আমরা সচারাচর কখনো খাইনা।ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলে আমাদের জন্য ওয়েলকাম ড্রিংক পরিবেশন করা হয়৷আমি আর জান্নাত ড্রিংকসটা নিয়ে এক চুমুক একসাথে খেয়ে নেই।জান্নাত খেয়ে বলে…..

জান্নাতঃমজা অনেক।

আমি মুচকি হেসে দিলাম।জান্নাতকেকে অনেকটা আনকমফোর্টেবল লাগছিলো।তাই জিজ্ঞেস করলাম…..

আমিঃঅস্বস্তি লাগছে?

জান্নাত আস্তে আস্তে করে আমাকে বলে…..

জান্নাতঃআশেপাশে কতো চুপচাপ আর নিরিবিলি,মনে হচ্ছে ভূতুড়ে কোনো জায়গায় এসে পড়েছি।আমার তো খুব নার্ভাস লাগছে।

আমিঃএটা ভি আই পি জায়গা তো তাই আশেপাশে কেউ নেই।আপনি আপনার মনের মতো করেই বসুন।

জান্নাত আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে বলে…..

জান্নাতঃএকটা অনুরোধ করি রাখবেন?

আমিঃএকটা কেন হাজারটা করুন।

জান্নাতঃআমি তো আপনার অনেক ছোট।আপনি যদি আমাকে তুমি করেই বলেন আমি খুব খুশি হবো।আপনার মুখে তুমি ডাকটা খুব মানায়৷

আমি জান্নাতের লজ্জাসিক্ত মুখখানার দেখে মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছি।ওকে এতো কিউট লাগে লজ্জা পেলে।আমি হেসে বললাম…..

আমিঃঠিক আছে।আমারও মনে মনে খুব ইচ্ছা ছিলো তোমাকে তুমি করেই বলার।যাক ইচ্ছাটা এবার পূরণ হলো।

জান্নাত লজ্জা পাচ্ছে খুব।এরমধ্যে আমাদের খাবার চলে আসে।সে খাবার দেখে তো পুরাই সকড।এতো এতো মজার মজার খাবার।ওয়েটার সব খাবার সার্ভ করে দিয়ে গেলে আমি জান্নাতকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলি…..

আমিঃএগুলো খেয়ে দেখো।অনেক মজা লাগবে।

জান্নাতঃএতোগুলো!

আমিঃআরে আগে শুরু তো করো।

এরপর আমরা দুজন খাবার খেতে শুরু করলাম।জান্নাতের খুব মজা লাগছিলো।ও নিজে নিজেই নিয়ে মজা করে খাচ্ছিলো।আমিও খাচ্ছিলাম।ডেজার্টে খুব মজার একটা আইসক্রিম অর্ডার করেছিলাম।যেটা আমাদের জন্য স্পেশাল করে বানিয়ে আনা হয়েছে।জান্নাত সেটা খেয়ে খুশিতে একদম আত্নহারা।আমি ওকে খুশি করতে পেরে আলাদা একটা শান্তি পাচ্ছিলাম মনে মনে।আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে অনেকটা সময় ওখানে বসেই দুজন গল্প করি।কারন বাইরে এখন রোদ,বের হয়ে লাভ নেই।আমি গালে হাত দিয়ে জান্নাতের ছোট বেলার গল্প গুলো শুনছিলাম।মাঝে মাঝে ওকে কেমন জানি বাচ্চা বাচ্চা লাগে।আবার মাঝে মাঝে একদম কিশোরী।আবার মাঝে মাঝে বউয়ের মতো লাগে।মেয়েদের কত্তো রূপ।

আমি জান্নাতকে যতো দেখি আমার মন ভরে না।অথচ অফিসে কতো মেয়ে কলিগ আমার।তাদের কাউকেই আমার ভালো লাগে না বা বিশ্বাস হয়না।কিন্তু জান্নাতের বিষয়টা ভিন্ন।ওর প্রতি অন্যরকম একটা মায়া,টান,অনুভূতি কাজ করে আমার।জানিনা কি নাম দিবো এই অনুভূতির৷জান্নাতের সাথে গল্প করতে করতে দুকাপ কফিও খেয়ে ফেললাম আমরা৷ঘড়িতে এখন সাড়ে তিনটা নাগাদ বাজে।আমি জান্নাতকে বললাম…..

আমিঃচলো এবার তোমাকে তোমার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাই।এখন তোমার অনেক ভালো লাগবে জায়গাটা।

আমিঃসত্যি?চলুন চলুন৷(খুব খুশি হয়ে)

আমি ওয়েটারকে বিল আর টিপস দিয়ে দিলাম।জান্নাত বিল দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় প্রায়৷আমি ওকে একটা গুতা দিয়ে বললাম,এখানে এরকমই দাম।কিন্তু সে মানবেই না।তার কথা একটাই তার পিছনে এতোগুলো টাকা নষ্ট হলো।আমি জান্নাতকে বুঝাতে বুঝাতে বের হচ্ছিলাম ওমনি হঠাৎ করেই পিছন থেকে…..

~ রাশেদ!

আমি আর জান্নাত দুজনই অবাকও হই আবার ভয়ও পাই।আমার পরিচিত কে আমাকে না না আমাদেরকে দেখে ফেললো!হায় হায়!এখন কি হবে?আমি জান্নাতের দিকে ভয়ে তাকাই,জান্নাতও সেইম আমার দিকে ভয়ে তাকায়।তারপর আমরা দুজনই একসাথে পিছনে তাকাই।দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত মেয়েটাকে না চিনলেও আমি ঠিকই তাকে এক নজরেই চিনে ফেলি।সে আর কেউ নয়,সে আমার প্রাক্তন ফারিয়া।

ফারিয়াঃকেমন আছো রাশেদ?

আমিঃভালো।তুমি?

ফারিয়াঃআছি।

ফারিয়া জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে…..

ফারিয়াঃও কে?

আমিঃকেন আমার একমাত্র বিয়ে করা স্ত্রী।আমার প্রিয়তমা,আমার ভালবাসার মানুষ।

জান্নাতকে হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বললাম জান্নাত সম্পূর্ণ অবাক,সাথে লজ্জাও পাচ্ছে।ফারিয়া মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো…..

ফারিয়াঃওহ!ভালো।দোয়া করি তোমরা হ্যাপি হও।আসি।

আমিঃঠিক আছে।

বলেই ফারিয়া দ্রুত চলে গেলো।জান্নাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে…..

জান্নাতঃউনি কে ছিলেন?

আমিঃআমার প্রাক্তন।

জান্নাতঃকিহ!তাহলে আপনি ওনাকে মিথ্যা বললেন কেন?আমরা তো…..

আমি জান্নাতকে চোখ দিয়ে ইশারা করলাম চুপ করার জন্য।তারপর ওকে ধরে নিয়ে রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে আসি।পার্কিং লটে বাইকের কাছে এসে জান্নাতকে বললাম…..

আমিঃতোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব আগে তোমাকে তোমার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাই চলো।

জান্নাতঃঠিক আছে চলুন।

এরপর আমি জান্নাতকে বাইকে নিয়ে রওনা হই সেই অপেক্ষাকৃত গন্তব্যে।দশ মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌঁছে যাই।বাইক থামাতেই জান্নাত দ্রুত বাইক থেকে নেমে নিজেই হেলমেট খুলে আশেপাশে তাকায়।ও পুরো অবাক।ও ঠিক যেমনটা চেয়েছিলো এখানের পরিবেশ এবং আশপাশটা সম্পূর্ণ তেমনই।জান্নাত অসম্ভব খুশি হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে৷ফ্রেশ ঠান্ডা হাওয়া এসে আমাদের গায়ে লাগছে।আমি জান্নাতকে ডাক দিলাম।এখানে বসার জন্য ব্যবস্থা করা আছে।জান্নাত দ্রুত এসে আমার পাশে বসলো।আমাদের ঠিক পিছনেই বড় একটা গাছ ছিলো যার জন্য আরো ভালো লাগছিলো তখন।জান্নাতের মনটা একদম ভরে গিয়েছে এই দৃশ্য দেখে আর এমন জায়গায় এসে।আমি ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম…..

আমিঃকি বলেছিলাম না,যে তোমার মনের মতো জায়গায় আমি তোমাকে নিয়ে আসবো।জায়গাটা পছন্দ হয়েছে?

জান্নাতঃপছন্দ মানে অসম্ভব পছন্দ হয়েছে।আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো আমার জানা নেই।তাও অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।সত্যিই আজ আপনি আমার সব আবদার পূরন করে দিলেন।আমি যদি কাল মরেও যাই আমার আর কোন আফসোস নেই।আমার ইচ্ছা যা ছিলো আপনি একদিনেই তা সব পূরন করে দিয়েছেন।আমার মনটা আজ সম্পূর্ণ ভরে গিয়েছে।

আমিঃকি যে বলো না,এখনো আরো কতো জায়গা ঘোরাঘুরি বাকি।লালবাগ কেল্লায় নিয়ে যাবো কাল তোমাকে।ওখানে অস্থির মজার বিরিয়ানি আর কাচ্চি পাওয়া যায়।কেল্লা দেখে আসার সময় কাচ্চি আর বিরিয়ানি দুটোই খেয়ে আসবোনি।

জান্নাত হাসে আমার কথা শুনে।তার খুব ভালো লাগে আমার কথা শুনতে।আসলে শুধু কথা না আমার সবকিছুই তার অনেক ভালো লাগে।জান্নাত আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো…..

চলবে…..

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *