সিনিয়র আপু যখন বউ শেষ পর্ব


এই কথা বলেই কলটা কেটে দিলো। যাহ্ বাবা কেটে দিলো। এখন কি করি নাহ্ এখনই ফুসকা নিয়ে বাসায় যেতে হবে তানা হলে যেই রাগি মেয়ে না জানি পরে কি করবে আল্লাই ভালো জানে। তারপর আর দেরি না করে ফুসকা নিয়ে বাসায় গেলাম। রুমে যেতেই সাদিয়া আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে গালে একটা কিস দিয়ে বলে,,,,,

সাদিয়াঃ আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আসবে।
আমিঃ না এসে কি আর উপায় আছে।
সাদিয়াঃ এখন দাও আমার ফুসকা।
আমিঃ এই নাও।
তারপর সাদিয়া কে ফুসকা দিলাম। সাদিয়া সব একটা একটা করে সব কয়টা ফুসকা খেয়ে নিলো। কি আশ্চর্য আমাকে একটুও সাধার প্রয়োজন মনে করলো না। অবশ্য আমি এসব তেমন একটা খায়না। ও খাচ্ছে আমি শুধু এক পলকে চেয়ে আছি। একদম বাচ্চাদের মত করে খাচ্ছে। ওর খাওয়ার স্টাইল দেখে কে বলবে যে ও দুদিন পর বাচ্চার মা হবে। খাওয়া শেষ করে আমার নাকে টান দিয়ে বলে,,,,,,,

সাদিয়াঃ আমার জামাই টা অনেক ভালো।
আমিঃ তাই বুঝি।তাহলে এখন খাওয়া শেষ আমি তাহলে যায়।
সাদিয়াঃ যায় মানে এখন তুমি আবার কোথায় যাবে।
আমিঃ বারে অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে সেগুলো করতে হবে না।
সাদিয়াঃ এখন আর কিসের জন্য যাবে একটু পরই তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
আমিঃ সন্ধ্যা হতে এখনও অনেক দেরি।
সাদিয়াঃ তারপর ও আজ আর যাওয়া লাগবেনা।
আমিঃ তাহলে এখন বাসায় থেকে কি করবো।
সাদিয়াঃ আমার সাথে ছাদে বসে গল্প করবে।
তারপর আর কি করার সাদিয়ার ফ্রেশ হয়ে সাদিয়ার সাথে ছাদে চলে গেলাম। ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে আছি সাদিয়ার মাথা আমার বুকের উপর। আজকের বিকালটা যেন অন্য রকম লাগছে। হয়তো প্রিয় মানুষটি কাছে আছে এই জন্য আজ প্রকৃতিটা ও পরিবর্তন হয়েছে। হঠাৎ করে সাদিয়া আমার বুক থেকে মাথা তুলে আমাকে বলে,,,,,,,,,,,,,,,,,,

সাদিয়াঃ আচ্ছা বলোতো আমাদের আগে ছেলে সন্তান হবে নাকি মেয়ে সন্তান।
আমিঃ আমাদের আগে মেয়ে সন্তান হবে ঠিক তোমার মত।
সাদিয়াঃ না আমাদের আগে ছেলে সন্তান হবে।
আমিঃ নাহ্ আগে মেয়ে হবে।
সাদিয়াঃ আমি বলছি ছেলে হবে।
মাঃ কিরে তোরা ২জন আবার কি নিয়ে ঝগড়া করছিস।
সাদিয়াঃ দেখোনা মা আমি বলছি আমাদের আগে ছেলে হবে।কিন্তু আপনার ছেলে বলছে মেয়ে হবে।
আন্টিঃ হাহাহাহা। বেয়াইন শুনলেন দু’জনের কথা।
মাঃ হুমম শুনলাম তো।
সাদিয়াঃ আচ্ছা এখন তোমরাই বলো আমাদের আগে কি হবে।
আন্টিঃ সেটা তো পরেই জানা যাবে। এসব নিয়ে এখন ঝগড়া করে লাব নাই।
তারপর আমরা সবাই মিলে এক সাথে ছাদে কিছু সময় গল্প করে রুমে চলে যায়। এমন ভাবে ভালোই কাটছিলো আমাদের সুখের সংসার। এদিকে বাচ্চা হওয়ার তারিখ ও ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিলো। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ বুকে ভারি কিছু অনুভব করলাম। চোখ খুলে দেখি সাদিয়া আমার বুকের উপর শুয়ে তাই আমি আর নরলাম না। কিন্তু একটু পর আমি খেয়াল করলাম যে সাদিয়া কাদছে। কি ব্যাপার এই মাঝ রাতে ও আবার কাঁদছে কেন। ওর আবার কষ্ট হচ্ছে না তো। তারপর আমি সাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,

আমিঃ এই তুমি কাঁদছো কেন।
সাদিয়াঃ,,,,,,,। (কিছুই বলছে না কেঁদেই চলছে।)
আমিঃ তোমার কি কষ্ট হচ্ছে।
সাদিয়াঃ না।(কান্না জরিত কন্ঠে)
আমিঃ আরে বুকা তাহলে কাঁদছো কেন। বলো আমাকে কি হয়ছে।
সাদিয়াঃ জানো আমি একটা স্বপ্ন দেখছি।
আমিঃ কি স্বপ্ন দেখছো।
সাদিয়াঃ আমি স্বপ্ন দেখছি যে আমাদের বাচ্চা হওয়ার পর তুমি আর আমাকে ভালোবাসোনা।(কেঁদে)
আমিতো ওর কথা শুনেই অবাক হয়েছি।বলে কি মেয়ে। এখন আমি ওকে কি বলে সান্তনা দেব বুঝতে পারছিনা।তারপর ও বললাম,,,,,,,,,,,
আমিঃ আরে পাগলি বউ আমার স্বপ্ন দেখে কেউ কাঁদে নাকি।
সাদিয়াঃ তাহলে তুমি কেন আমাকে ভালোবাসবা না বলো।
আমিঃ আরে বোকা কে বলেছে ভালোবাসবোনা। আর তোমাকে ভালোবাসবো না তো কাকে ভালবাসবো শুনি।
সাদিয়াঃ যদি স্বপ্নের মত সত্যি ও যদি বাচ্চা হওয়ার পর তুমি আমাকে ভালো না বাসো।
আমিঃ ধূর পাগলি এসব স্বপ্নের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে লক্ষি মেয়ের মত ঘুমাও এখন।
সাদিয়াঃ সত্যি আমাকে ভালোবাসবে তো।
আমিঃ হুমম শেষ নিশ্বাস পর্যন্তুক ভালোবাসবো।এখন চুপ করে ঘুমাও তো।
তারপর সাদিয়া কে বুকি জড়িয়ে ধরে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। পাগলি একটা স্বপ্ন দেখে কান্নাকাটি করে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে সাদিয়া কে না ডেকে ওর কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়ে অফিসে চলে গেলাম। বর্তমান সাদিয়ার শরীরটাও ভালোনা খুব টেনশন হয় ওকে নিয়ে। যেই পাগলি মেয়ে কখন কি হয় কে জানে। বাসা থেকে বের হওয়ার সমায় মাকে বললাম,,,,,,,,,,

আমিঃ মা সাদিয়া ঘুমাচ্ছে তোমরা ওর পাশে পাশে থেকো সব সময়।
আন্টিঃ তুমি ওকে নিয়ে একদম চিন্তা করোনা আমরা তো আছি।
মাঃ একি নাস্তা না করে যাচ্ছিস কেন। নাস্তাটা তো করে যা।
আমিঃ অফিসে গিয়ে করে নেবো।
এই কথা বলে অফিসে চলে গেলাম।অফিসে বসে বসে কাজ করছি এমন সময় মোবাইল টা বেজে উঠলো। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা কল দিছে,,,,,,,

আমিঃ হ্যালো বাবা।
বাবাঃআরমান তুই যেখানেই থাকিস না কেন তাড়াতাড়ি,,,,,,,, এই হাসপাতালে চলে আয় বৌমার ব্যাথা উঠছে তাই আমরা ওকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।
আমিঃ বাবা আমি এক্ষুনি আসছি।
বাবাঃ হুমম তাড়াতাড়ি আয় ডাক্তার বলছে বৌমাকে নাকি অপারেশন করতে হবে।
আমিঃ কিহ্। অপারেশন কিন্তু কেন।
বাবাঃ এসব কথা বলার সময় এখন নেই তুই আর দেরি না করে চলে আয়।
এই কথা বলে কলটা কেটে দিয়ে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম হাসপাতালে উদ্দেশ্যে। একটু পর আবার বাবার কল। নাহ্ বাবা আবার কেন কল দিছে ওদিকে সব ঠীক আছে তো। সাদিয়ার কিছু হয়নি তো আবার। নাহ্ আমার সাদিয়ার আমি থাকতে কিছু হতেই পারেনা ধূর আমিও যে কি বুঝিনা কেন যে মাথার ভেতর এমন আজে বাজে কথা আসছে। এসব ভাবতে ভাবতে কলটা কেটে গেলো আবার দিলো কিন্তু এবার আর আমি দেরি না করে সাথে সাথে রিসিভ করলাম,,,,,,,,,

আমিঃ হ্যালো বাবা সাদিয়া ঠীক আছে তো।
সাদিয়াঃ হুমম আমি ঠীক আছি।
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ।
সাদিয়াঃ ঐ আমার না খুব ভয় করছে।
আমিঃ তুমি কোন ভয় পেয়েও না আমি এক্ষুনি আসছি তোমার কিচ্ছু হবেনা।
সাদিয়াঃ আচ্ছা বাচ্চা হওয়ার পর তুমি আমাকে ঠীক আগের মত ভালোবাসবে তো।
আমিঃ ধূর পাগলি তুমি কি যে বলোনা।
সাদিয়াঃ আচ্ছা এখনই আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
আমিঃ এইতো আমি এক্ষুনি আসছি।
সাদিয়াঃ জানিনা বেঁচে ফেরত আসতে পারবো কিনা। শুনেছি অনেকে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। আমি যদি মরে যায় তাহলে আমাদের ছেলে হক বা মেয়ে তুমি তাকে কখনও আমার অভাব বুঝতে দিবেনা কেমন।(কেঁদে দিয়ে)
আমিঃ ঐ পাগলি তুমি এসব কি বলো হ্যা। দেখো তোমার কিচ্ছু হবেনা। আর একটা বাজে কথা বললে একটা মাইর দেবো কিন্তু।(কেঁদে দিয়ে)
সাদিয়া,,,,,,,,,,।( ওপাশ থেকে সাদিয়া আর কোন কথা বলছেনা শুধু কেঁদে যাচ্ছে)
আমিঃ হ্যালো হ্যালো।
মাঃ বাবা বৌমাকে এখন ডাক্তার রা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবে তাই আর কথা বলতে দিচ্ছে না।
আমিঃ আচ্ছা মা আমি আসতেছি।
এই কথা বলে কলটা কেটে দিলাম। সাদিয়ার সাথে কথা বলে খুব কষ্ট হচ্ছে খুব চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে। অবশেষে হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম। আমি তাড়াতাড়ি অপারেশন থিয়েটারের সামনে গিয়ে দেখি সবাই চুপ করে বসে আছে।আমি কাছে যেতেই বাবা আর আংকেল আমার দিকে এগিয়ে আসে।তারপর আমাকে সিটে বসিয়ে দিয়ে আংকেল আমাকে বলে,,,,,,,,,

আংকেলঃ বাবা তুমি কোন টেনশন করোনা আল্লাহ কে ডাকো সব ঠীক হয়ে যাবে।
আমিঃ আংকেল ডাক্তার কি বলছে।
আংকেলঃ এখনও কিছু বলেনি।
আমিঃ সাদিয়া কেমন আছে। ও ঠীক আছে তো।
আংকেলঃ জানিনা বাবা। ডাক্তার সেই যে সাদিয়া কে নিয়ে গেছে এখনও বের হয়নি।
তারপর আমি আর কোন কথা না বলে শুধু মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগালাম ” হে আল্লাহ আমার সাদিয়ার যেন কিছু না হয়। ও যেন ভালো থাকে। একটু পর অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসলো। কিন্তু উনার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে উনি খুব চিন্তিত। তার পর আমি দৌড় দিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,,,,,,

আমিঃ ডাক্তার সাহেব আমার স্ত্রীর কি খবর ও ভালো আছে তো।
ডাক্তারঃ Congestion আপনার একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে সন্তান হয়ছে। মানে আপনার জমজ সন্তান হয়ছে।
ডাক্তারের মুখে এই কথাটা শুনে আনন্দে মনটা ভরে। সবার চিন্তায় থাকা মুখে যেন একরাশ হাসির দেখা মিললো।কিন্তু এ হাসি যেন বেশিক্ষণের নয় তা কেউ জানতো না। কেন জানিনা এই আনন্দের মাঝে মনের ভেতর কি যেন হারিয়ে ফেলার একটা ভয় এসে ঘিরে ধরছে। তারপর আমি ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করি,,,,,,,,,

আমিঃ ডাক্তার সাদিয়া কেমন আছে।
ডাক্তারঃ,,,,,,,,,,,,,,,। (চুপ)
আমিঃ কি হলো ডাক্তার আপনি এমন চুপ করে আছেন কেন কিছুতো বলুন।

ডাক্তারের এমন চুপ করে থাকতে দেখে সবার হাসি মুখটা এক নিমেষে কালো হয়ে গেলো। নিজের অজান্তে চোখ বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো। মনের ভেতর সেই হারানো ভয়টা এবার ঘিরে ধরছে। তার মানে কি আমার সাদিয়া আর নেই। নাহ্ এ হতে পারে না আমার সাদিয়ার কিছু হতে পারেনা। আমি জানি আমার সাদিয়া ঠিক আছে কিন্তু ডাক্তার কিছু বলছে না কেন। সে কেনো এভাবে চুপ করে আছে।

আমিঃ আরে ডাক্তার সাহেব আপনি এমন চুপ করে আছেন কেন কিছুতো বলুন। আমার সাদিয়া কেমন আছে।
ডাক্তারঃ আসলে কথাটা যে আপনাদের ঠিক কি ভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।
বাবাঃ কি কথা ডাক্তার বলুন আমাদের।
ডাক্তারঃঅপারেশন এর আগে আমরা টেস্ট করে দেখি যে উনার পেটে জমজ সন্তান।
আংকেলঃ তারপর।
ডাক্তারঃ আসলে পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমাদের বাচ্চা অথবা মা যে কোন একজন কে বাচাতে হবে। তখন আমরা ঠিক কি করবো এটা শোনার জন্য আপনাদের কাছে আসতে যাবো ঠিক তখনই আপনার স্ত্রী আমাদের বলে,,,,,,,,,

সাদিয়াঃ ডাক্তার আপনাকে এমন চিন্তিত লাগছে কেন। কোন সমস্যা।
ডাক্তারঃ না না কোন সমস্যা না।
সাদিয়াঃ প্লিজ ডাক্তার কোন সমস্যা হলে আমাকে বলুন। আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো।
ডাক্তারঃ বাচ্চা ঠিক আছে। বাচ্চার কোন সমস্যা হয়নি।
সাদিয়াঃ আমি আপনাদের সব কথা শুনেছি। তাই আমার থেকে আর কিছু লুকাবেন না।
ডাক্তারঃ আসলে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো যাতে করে কোন সমস্যা না হয়।
সাদিয়াঃ ডাক্তার আমাকে নিয়ে ভাববেন না আপনি যে ভাবে হক আমার বাচ্চাকে বাঁচাবেন।
ডাক্তারঃ দেখুন আমরা এমনটা করতে পারিনা এর জন্য আপনার পরিবারের অনুমতি লাগবে।
সাদিয়াঃ তাদের বলে লাব নেই তারা আমার সন্তান কে নয় আমাকে বাঁচানোর কথা বলবে। তাই আমি যা বলছি তাই করুন আপনি।
ডাক্তারঃ তারপর ও আপনার স্বামীর সাথে আমাদের একটু কথা বলতে হবে।
সাদিয়াঃ প্লিজ ডাক্তার আপনি তাদের কিছু বলবেনা না। আপনি আমি যা বলছি তাই করুন। আমি আপনাদের সব এগ্রিমেন্টে সাক্ষর করছি।
ডাক্তারঃ তার পর আমরা আর কোন উপায় না পেয়ে অপারেশন শুরু করেদি।
আমিঃ ডাক্তার ও তো নিজেই বাচ্চা আপনারা কেন ওর কথা শুনলেন।
ডাক্তারঃ দেখুন আপনার স্ত্রী আমাদের বাধ্য করছে।আমাদের আর কিছুই করার ছিলোনা।
আমিঃ,,,,,,,,,,,,,।(চুপ)
ডাক্তারঃ আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি যেন আপনার স্ত্রী সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু এখনও তার জ্ঞান ফিরেনি।
আমিঃ ওর জ্ঞান কখন ফিরবে ডাক্তার।
ডাক্তারঃ দেখুন এটা আমরা বলতে পারবোনা আমাদের হাতে আর কিছু নেই। আপনার বরং আল্লাহ কে ডাকুন। উনি এক মাত্র শেষ ভরসা।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলেন। আর আমি সাথে সাথে নিচে বসে পড়লাম ডাক্তারের কথা শুনে সবার চোখে এখন অঝরে পানি ঝড়ছে। এক দিকে বাবা হওয়ার আনন্দ অন্য দিকে ভালোবাসা কে হারি ফেলার ভয়। এদিকে মা আমার কাছে এসে আমার কাঁধে হাত রাখে তারপর আমি মাকে বলি,,,,,,,,,,

আমিঃ ও মা তুমি শুনলে ডাক্তার কি বলে গেলো। আমার সাদিয়া নাকি আর বাঁচবে না। বলোনা মা ডাক্তার মিথ্যা বলছে।( কেঁদে কেঁদে)
মাঃ দেখ বাবা তুই এখন ২ সন্তানের বাবা। এমন ভাবে না কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয় কর দেখবি আল্লাহ তোর কাছ থেকে তোর ভালোবাসা কে কখনও কেরে নিবেনা।
আমিঃ মা আমি সাদিয়া কে ছাড়া কি ভাবে বাঁচবো বলনা মা। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। (কেঁদে কেঁদে)
মাঃ বাবা শান্ত হ তুই দেখবি সাদিয়ার কিচ্ছু হবেনা।
আমিঃ তাই যেন হয় মা।
এর মাঝে মসজিদে আযান শোনা গেলো। আমি বাবা আর আংকেল চলে গেলাম নামাজ আদায় করতে। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করলাম। হে আল্লাহ তুমি পরম করুণাময় অসীম দয়ালু। হে আল্লাহ তুমি আমার কাছ থেকে সাদিয়া কে কেরে নিওনা। হে আল্লাহ সদ্য পৃথিবীতে আসা নিস্পাপ তোমার ২ টি বান্দা তাদের কাছ থেকে তুমি তাদের মাকে কেরে নিওনা। হে আল্লাহ আমার এই দোয়া তুমি কবুল করো। আমিন।

নামাজ শেষ করে হাসপাতালে এসে দেখি মা আর আন্টি কোলে দুটি বাচ্চা। হ্যা এরা ২ জনই আমার আর সাদিয়ার সন্তান। আমি কাছে যেতে মা আর আন্টি ওদের আমার কাছে নিয়ে আসলেন। তারপর আমি ওদের দুজনকে কোলে নিয়ে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম। বাবা হওয়ার আনন্দটা যে কি আজ বুঝতে পারলাম। নিজের অজান্তে চোখ বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো। আমি আবার ওদের মা আর আন্টি কোলে দিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম,,,,,,,,

আমিঃ ডাক্তার আমি কি সাদিয়ার কাছে যেতে পারি।
ডাক্তারঃ উনাকে তো (ICU) তে রাখা হয়ছে।
আমিঃ প্লিজ ডাক্তার আমাকে একটি বার যেতে দিন।
ডাক্তারঃ আচ্ছা যান। কিন্তু প্রেসেন্টের কাছে গিয়ে শব্দ করবেন না।
আমিঃ ঠিক আছে ডাক্তার।
এই কথা বলে আমি সাদিয়ার কাছে চলে গেলাম। সাদিয়া কে দেখতে একদম মায়াবী লাগছে। চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গেছে। আমি গিয়ে ওর মাথার কাছে বসলাম। মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলাম। কিহ্ পাগলি এদিকে আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে নিজে খুব শান্তিতে ঘুমানো হচ্ছে তাইনা। একবার খালি ঘুম থেকে উঠে নাও তারপর বুঝাবো মজা। আচ্ছা তোমার আর কোন কথার অবাদ্য হবোনা। তুমি যখন যা বলবে সব শুনবো। ঐ আমার সাথে তোমকে আর ছেলে মেয়ে নিয়ে ঝগড়া করতে হবেনা। কারণ আমাদের একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হয়েছে। তুমি তাড়াতাড়ি চোখ খুলো তারপর বাচ্চাদের নামটা তো রাখতে হবে।

তুমি কি বুঝতে পাড়ছোনা যে তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচব। তুমি কেন বুঝোনা যে তুমি বেঁচে না থাকলে যে আমিও মরে যাবো। প্লিজ তুমি চোখ খুলো। কথা গুলো বলার সময় চোখ বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো। তার পর আমি চোখটা মুছে সাদিয়ার কপালে একটা কিস করে যেইনা চলে যেতে যাবো ঠিক তখন সাদিয়া আমার হাত টেনে বলে,,,,,,,

সাদিয়াঃ ঐ কথায় যাওয়া হচ্ছে আমাকে ফেলে রেখে।(একটা মৃদু হাসি দিয়ে)
আমিঃ ঐ পাগলি তুমি ভালো হয়ে গেছো।( আনন্দে কি করবো বুঝতে পারছি না)
সাদিয়াঃ তুমি কি ভাবছো এত সহজে আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাবো। সেটা কখনও না।
আমিঃ আমিও তোমাকে কথাও যেতে দেবোনা সারাজীবন ভালোবাসে আমার এই বুকের মধ্যে আগলে রাখবো। আর আমিও তোমাকে ছেড়ে কথাও যাবো বলো তুমিই তো আমার সব।
সাদিয়াঃ আমি যেতে দিলে তো যাবে।
আমিঃ আমি তোমাকে ছেড়ে কথাও যাবোনা। আচ্ছা তুমি থাকো আমি ডাক্তার কে ডেকে নিয়ে আসি।
সাদিয়া আমার হাত ধরে কথা বলছিলো এমন সময় ডাক্তার এসে বলে,,,,,,,,,

ডাক্তারঃ একি আপনাকে বলছি পেসেন্টের সাথে কথা বলবেন না। তারপর ও আপনি কথা বলছেন।
আমিঃ ডাক্তার আমার সাদিয়া ভালো হয়ে গেছে। ও আমার সাথে কথা বলছে।
ডাক্তারঃ বলেন কি। কৈই দেখিতো।
সাদিয়াঃ ডাক্তার আমি এখন অনেকটা ভালো আছি। আল্লাহ এ যাত্রাই আমাকে বাচিয়ে দিলেন।
ডাক্তারঃ আরে হ্যা সত্যি তো আপনি সুস্থ হয়ে গেছেন।
সাদিয়াঃ ঐ আমি আমার সন্তান দের দেখবো কথায় তারা তুমি তাদের আমার কাছে নিয়ে আসো।
ডাক্তারঃ আপনারা ২ জন থাকুন আমি তাদের ভেতরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলেন। তারপর সকলকে ভেতরে পাঠিয়ে দিলেন। সাদিয়া কে সুস্থ দেখে সকলের মুখে যেন হাসি ফুটে উঠলো। তারপর মা আর আন্টি আমাদের মেয়ে আর ছেলেকে সাদিয়ার কোলে দিলো। সাদিয়া ২জনকে কোলে নিয়ে কাঁদতে লাগলো।কিন্তু এটা কোন দুঃখ্যের কান্না নয় এটা হচ্ছে জীবন যুদ্ধে বেঁচে ফেরার লড়াইতে বিজয়ী হয়ার কান্না,,,,,

আমিঃ এই পাগলি কান্না থামাও বলছি।
সাদিয়াঃ জানো যখন অপারেশন এর আগে জানতে পারলাম যে কোন একজন বাঁচবে তখন আমার মনে হয়ছিলো আমি মনে হয় আমার সন্তান দের দেখতে পারবোনা।(কেঁদে কেঁদে)
আমিঃ ধুর পাগলি এখন কান্না থামাও। এখন আর বাচ্চাদের মত করলে হবেনা। এখন তুমি আর বাচ্চা না এখন তুমি ২ বাচ্চার মা হয়ে গেছো।
মাঃ হ্যারে মা আর কাঁদিস না।দেখতো আমাদের এই দাদু ভাইরা তো কান্না করছেনা।
সাদিয়াঃ হুমম মা এদের সাথে সাথে আরো একটা বাচ্চা কে দেখে রাখতে হবে।
আমিঃ আরো একটা বাচ্চা মানে। আর একটা বাচ্চা তুমি কথায় পেলে। আমাদের তো জমজ সন্তান হয়ছে।
সাদিয়াঃ কেন আর একটা বাচ্চা হচ্ছ তুমি। কারণ তুমিও তো এখনও বাচ্চা।
আমিঃএ্যাএ্যাএ্যা। আমি আর এখন বাচ্চা না।এখন আমি বাচ্চাদের বাবা হয়ছি বুঝলেন আমার সিনিয়র বউ।
সাদিয়াঃ আহারে আমার জুনিয়র জামাইটা রে।(নাকে টান দিয়ে)
আমার নাকে টান দিয়ার সাথে সাথে ওরা ২জন কেঁদে উঠলো।
আমিঃ দেখছো বাবাকে মারছো এটা দেখে ওরাও কাঁদছে।
সাদিয়াঃ এ্যাএ্যাএ্যা বল্লে হলো।
আমিঃ আচ্ছা বলো এবার আমাদের মেয়ে আর ছেলের কি নাম রাখা যায়।
সাদিয়াঃ আমাদের মেয়ের নাম হচ্ছে সৃষ্টি আর ছেলের নাম হচ্ছে শ্রাবন্ত।
আমিঃ বাব্বা নাম কি আগে থেকে ঠীক করে রাখছিলে নাকি।
সাদিয়াঃ না নয়তো কি হ্যা।
আমিঃওরে আমার পাগলি সিনিয়র বউরে।
এই কথা বলে আমি সাদিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে সাদিয়া কে আমার বুকে জরিয়ে নিলাম। আমাদের এমন কান্ড দেখে ওখানে থাকা ডাক্তার সহ সবাই হাসতে লাগলো।তারপর সবাই আমাদের একা রেখে বেরিয়ে গেলো।

সাদিয়াঃ ঐ একটা কিস দাওনা।
আমিঃ কিহ্। ছেলে মেয়ে দেখবে তো।
সাদিয়াঃ ওরা দেখলে কিছু হবেনা। ওরা ভাববে বাবা মাকে আদর করছে।
আমিঃ ছেলে মেয়ে ছাড়া আরও মানুষ আছে।
সাদিয়াঃ কৈই এখানে তো আর কেউ নেই।
আমিঃ আরে আমাদের পাঠক / পাঠিকারা আছেতো। তারা তো দেখে ফেলবে।
সাদিয়াঃ তাহলে তাদের কাছ থেকে বিদায় নাও।

আমিঃ আচ্ছা। বন্ধুরা গল্প তো এখানেই শেষ এবার আপনারা আসতে পারেন।আবার দেখা হবে দ্রুত আগামী গল্পের সাথে। আর কোন কথা নয় এখন আমি আমার সিনিয়র বউটাকে একটা কিস দিয়ে নি।উম্মম্মম্মাহহহহ্।
“””””””””””””””””””””সমাপ্ত”””””””””””””””””””””””””””

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *