লাবন্যকে নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে চলে গেলাম৷যাওয়ার পর মন মাতানো প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে পেয়ে তো মনটাই জুড়িয়ে গেল৷আর দেশি বিদেশি হাজারও মানুষ ছবি তোলায় ব্যস্ত৷একের পর এক সমুদ্রের ঢেউ পাড়ে আছড়ে পরছে৷ইস কতই না সুন্দর আল্লাহর এই দুনিয়া৷আর হঠাৎ লাবন্যর দিকে চোখ যেতে তো আরও ক্রাশ৷একদম প্রকৃতির রুপের সাথে ওর রুপ মিশে যাচ্ছে৷একদম মন মাতানোর মত একটা দৃশ্য৷আর তখনই লাবন্যর মূখ থেকে আওয়াজ আসল..
–ওয়াও,কি সুন্দর দৃশ্য,একদম চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে আমার,আরমান তোমার কেমন লাগছে?
–আমার?আমার তো হেব্বি ভালো লাগছে,একসাথে দুইটা জিনিস উপভোগ করছি!হি হি হি
–দুইটা?আমি তো শুধু প্রকৃতির অপরুপ দৃশ্যই দেখতে পাচ্ছি,আর দেখো দেখো,কত বিচিত্র রকমের মানুষ আছে এখানে,তাই না?
–হুম.
–তুমি বুঝি ওদের কথাই বলছো?
–আরে না,এর থেকেও সুন্দর,
–তাহলে বলো,সেটা কি,আমিও দেখবো
-আরে মেম,নিজের রুপ কি নিজে উপভোগ বা দেখা যায় নাকি ?(মনে মনে)
—কি হলো চুপ কেন?বলো কি দেখছো?.
–আরে আমি তো এমনিতেই মজা করছিলাম
–ধুররর,আচ্ছা ওই যে দেখো,কতগুলো মানুষ ঝিনুক কুড়াচ্ছে,চলো আমরাও কুড়াই.
–হুম চলো,
ও তখনই আমার থেকে একটু এগিয়ে গিয়েই ঝিনুক কুড়ানো শুরু করল৷
ও ঝিনুক কুড়াচ্ছে আর আমি আড় চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছি৷একদম ছোট্ট বাচ্ছাদের মত ঝিনুক কুড়ানো শুরু করল৷কেন যে দিন দিন ওর প্রতি এত দুর্বল হয়ে পড়ছি বুঝতেই পারিনা৷আর না হয়েও কি পারা যায় নাকি?কি সুন্দর মন মাতানো তার হাসি,ওর হাসিটাই আমার কাছে পৃথিবীর সব চাইতে সুন্দর জিনিস৷যেটা সারাজীবন দেখলেও হয়ত মন ভরবে না৷হঠাৎ ই লাবন্য বলে উঠল
–এই আরমান,এইদিকে আসো ,দেখো কত ঝিনুক কুড়াইছি,কত সুন্দর সুন্দর ঝিনুক৷ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে,একদম ঝিনুক কুড়ানি হয়ে গেছি,তোমাকে কিন্তু একটাও দিবো না
–আমার লাগবেও না,আমি কি চাইছি নাকি?হূম?আমি নিজেই কুড়িয়ে নিবো
–দিলে তো চাইবা
হি হি হি,
বলেই লাবন্য একটা হাসি দিল৷মনের ভিতর তখন প্রেমের ঝড়ের বাতাস বইতে লাগল৷
আর তখনই মনে পড়ে গেল.
ওপপস ,আজকে না ,লাবন্যকে প্রপোজ করার কথা ছিল!মনের আনন্দে তো ভুলেই গেছি,যাক ভালোই হইছে,একটু পরই সূর্য যখন প্রায় অস্ত যাবে,সন্ধার আকাশটা যখন লাল বর্ণ ধারন করা আরম্ভ করবে,তখন সেই কল্পনার মুহূর্তেই ওকে প্রপোজ করে ফেলব, হি হি.
–ওই আরমান,ভিরভির করে কি বলছো?আর হাসছো কেন?
–আরে এমনিতেই,আর ভাবছি,, আমি অনেক সুন্দর সুন্দর ঝিনূক কুড়াবো,তখন তোমাকে দেখায়ে দিবো আমিও পারি.
–তুমি কচুটা পারো,এএহহহ আমার থেকেও ভালো ঝিনুক কুড়াবে,বল্লেই হলো ?
–হূম বল্লেই হলো
–তো কুড়িয়ে দেখাও দেখি
–টাইম হলেই দেখবা,ঝিনুকের চেয়ে আজ অনেক দামি আর অনেক সুন্দর একটা জিনিস,এই সমুদ্র পাড় থেকে কুড়িয়ে নিবো,আর সেই সুন্দর জিনিসটা দিয়ে লাইফটাকে একদম সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলব. হি হি হি
–ওরে বাবা,তাই নাকি?কি এমন জিনিস যেটা দিয়ে তুমি তোমার লাইফটাকেই সুন্দর করে ফেলবা.
-হি হি হি এখন বলবো না,আর একটু অপেক্ষা করো,তারপরই বলব
–না এখনই বলো
–আরে এখনও তো পাইনি,আগে তো পাই,তারপর বলি
–হুম পাওয়া মাত্রই কিন্তু আমাকে বলবে,একদম লুকাবে না
–হুম
মনে মনে বলতে লাগলাম,লাবন্য আমি তো তোমাকে পেয়েই গেছি,তোমার থেকে সুন্দর ,আমার জন্য এই সমুদ্র সৈকতে কিছুই হতে পারেনা৷এখন শুধু সেটা নিজের করে নিতে হবে ৷তারপরই হি হি হি
লাবন্য তখনও ঝিনুক কুড়াতেই লাগল,আর ও তখণ আমাকে বলল
–আরমান,আমাকে ধরতে পারবে?
–ধরতে পারব না কেন?এটা কোনো ব্যাপার হলো নাকি?
–তাহলে ধরো তো দেখি,
যখনই ধরতে যাবো তখনই ও সমুদ্রতে নেমে গেলো
আর আমি তখন জোড়ে জোড়ে বলতে লাগলাম
–ওই লাবন্য,সমুদ্রে এখন নেমো না,দেখো কত ঢেউ আসছে,আর এখনই চলে আসো(আমি)
–আরমান আমাকে ধরো পারলে!
–আমি হার মেনে নিলাম,ধরতে পারব না,এবার উপরে উঠে আসো
–হি হি হি,সমুদ্রে নামলে এত ভালো লাগবে আগে তো জানি নাই,একটু গোসল করে নেই
–এই অসময়ে ভিজলে জ্বর এসে যাবে,আর ঢেউ আসছে,উপরে উঠো
–হি হি হি,উঠবো না
আর তখনই অনেক বড় অনেক উচু একটা ঢেউ আসল,আর লাবন্যকে তখন ভাসিয়ে নিয়ে গেল
–লাবনননননননননননন্–লাবনননননননননননন্য(চিৎকার দিয়ে)
সাথে সাথেই আমি ঝাপ দিলাম,আমার চিৎকার শুনে অনেক মানুষই আমাদের দিকে এগিয়ে আসল,
লাবন্যকে খোজা শুরু করলাম,কিন্তু পাচ্ছি না,বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে,
হায় আল্লাহ,তুমি ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না,আল্লাহ আমার জিবনের বিনিময়ে হলেও ওকে ফিরিয়ে দাও৷তখন চিৎকার করে কান্না করতে লাগলাম৷অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল৷হঠাৎ ই ঢেউয়ের মধ্যে একটা হাত উপরে উঠে আসল৷আমি তখনই ওইদিকে যেতে যাবো,তখন সবাই আমাকে বাধা দিল,কারন জায়গাটা অনেক বিপদ জনক,আমারও ক্ষতি হবার সম্ভবনা আছে৷কিন্তু কোনো কথাই শুনলাম না৷যার হাসি আমার পৃথিবীটাকেই আলোকিত করে ফেলে,তাকে কিভাবে বিপদে ফেলে একা স্বার্থপরের মত নিজের জীবন নিয়ে চলে আসব৷তখনই আর কোনো চিন্তা না করে ওখানেই ঝাপ দিলাম৷আর ওখানে তখন আর লাবন্যর হাত পাচ্ছিলাম না৷ঢেউয়ের কারনে অন্য জায়গায় চলে গেল৷হঠাৎ আরেক জায়গা থেকে হাত বেড়িয়ে আসল৷আর আমি কোনো ভাবে হাত ধরতেই দেখলাম আমার কাছেই সাহায্যকারির দল বোট নিয়ে হাজির৷আমাদের তখন ওইটাতে টেনে তোলা হলো৷এর পর আর কিছু মনে নেই৷
যখনই চোখ খুললাম দেখলাম আমি একটা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি৷আর তখনই লাবন্যর কথা মনে পড়ে গেল৷ও কোথায়?ও ঠিক আছে তো?
এক লাফে শোয়া থেকে উঠে পরলাম৷আর তখনই দেখলাম লাবন্যর বাবা আসল,আমি দৌড়ে গিয়ে লাবন্যর বাবার কাছে গেলাম৷আর কান্নারত অবস্থায় পাগলের মত করে বললাম..
–আংকেল,লাবন্য কই?ও ঠিক আছে তো?ওর কিছুই হয়নি তো(আমি)
-না বাবা,তুমি থাকতে ওর কিছু হতে পারে নাকি?ও ঠিক আছে বাবা
–ও কোথায়,?
–এই যে আমি(কিছুটা অপরাধীর মত লাবন্য)
তখন লাবন্য একদম অপরাধীর মত হয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইল৷
–লাবন্য ,তুমি ঠিক আছো তো(আমি)
–প্লিজ আরমান,আমাকে মাফ করে দাও,আজ আমার জন্যই তোমার এই অবস্থা,আমাকে বাঁচাতে গিয়েই তোমার এমন অবস্থা হইছে,তোমার কথা শুনলে সেদিন আর এমন হতো না(কান্না করে দিল)
–সেদিন মানে?(আমি)
–সেদিন মানে,যখন আমাকে বাঁচাতে গেলে
–আরে এটা তো আজ,তো সেদিন বলছো কেন?
–এটা আজ না,এটা আরও দি’দিন আগে
–দুদিন আগে???(অবাক হয়ে গেলাম)
–হুম,তুমি দুদিন জ্ঞানহিন অবস্থায় ছিলে.
(তখনই মনে একটা চিন্তার জন্ম নিলো,আমার তো তেমন কিছু হয়নি,তো আমি দুদিন জ্ঞানহিন অবস্থায় ছিলাম কেন?)
–আরমান,আমার জন্যই এমন হইছে,প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও(আরও কান্না করছে)
–ধুর বোকা,ওইটা কোনো বিষয় না,আরে তুমি কান্না করছো কেন?
–আসলে সত্যিই আরমান,তোমার মত বন্ধু পাওয়া অনেক বড় ভাগ্যের বিষয়.
–এগুলো বাদ দাও তো,এই দেখো আমি ঠিক হয়ে গেছি৷
সেদিন বিকেল বেলাই আমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হোটেলে চলে গেলাম৷
মাথায় কিছুই ধরছিল না,এমনটা কিভাবে হলো?বিকেলবেলা ঢেউ কম ছিলো,আর সমুদ্রে হঠাৎ এত জোড়ে ঢেউ,আর লাবন্য পানির নিচে ডুবে গেল,আর বাঁচাতে গিয়ে আমার এত সমস্যা হলো কেন?
আমার তো বেশি কিছু হয়নি৷তাহলে আমি কেন লাবন্যর চেয়ে বেশি অসূস্থ হলাম৷মাথায় ধরল না৷
যাই হোক লাবন্য ভালো আছে তো,এতেই আমি খুশি৷
সন্ধার দিকে শুয়ে রইলাম৷
আর তখনই লাবন্য আমার জন্য গরম দুধ নিয়ে এল,আর খেতে বলল,৷আমিও খেয়ে নিলাম৷
খাওয়ার পর লাবন্য কিছু একটা বলতে যাবে তখনই লাবন্যর বাবা আসল,
আর বলল..
–লাবন্য,মা তুই একটু বাইরে যা,আমর আরমানের সাথে কিছু জরুরি কথা বলব(লাবন্যর বাবা)
-ওকে বাবা(লাবন্য)
লাবন্য তখন চলে গেল,আর আমি ভাবতে লাগলাম কি এমন কথা যার জন্য লাবন্যকে ওনি রুম থেকে বের করে দিল৷তখনই ওনি বলল..
–এখন কেমন লাগছে বাবা?(লাবন্যর বাবা)
–জ্বি,খুব ভালো!
–হুম,ভালো থাকলেই ভালো,আর ভালোটাই আশা করি।
-হুম আংকেল
–আসলে বাবা,তোমাকে আমি অনেকদিন ধরেই একটা কথা বলব বলব ভাবছি কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছি না
–কি এমন কথা ?যেটা বলতে আপনি আমার কাছে সাহস পাচ্ছেন না
–কথাটা অনেক বড়ই,কিন্তু তারপরও কিভাবে যে বলব,বুঝতেছি না
-দেখুন আংকেল,আমি তো আপনার ছেলের মতই,তাই না?আমি জানি লাবন্যকে যতটুকু ভালোবাসেন,আমাকেও ঠিক ততটাই ছেলের মতই ভালোবাসেন,তো আমাকে নির্ভয়ে বলতে পারেন,ভয় পাবার কিছুই নেই
-হুম,নিজের ছেলের মত ভাবি বলেই তো এখন বলতে ভয় পাচ্ছি,যদি আমাকে ভুল বুঝো,ভুল বুঝে কষ্ট দাও আমাকে
–ভূল বুঝার কিছুই নেই
-আপনি নির্ভয়ে বলতে পারেন
–আসলে কথা বললে ভুল হবে,এটা একটা অনুরোধ,রাখবে তো
–হুম বলেন আংকেল
-আমি বলছিলাম ,তুমি তো জানোই লাবন্য আমার একমাত্র মেয়ে!আর তাকে আমি অনেক আদর স্নেহে বড় করেছি,আর আমি তাকে এমন একটা ছেলের সাথেই বিয়ে দেবো,যার যোগ্যতা আছে আমার মেয়েকে বিয়ে করার
(হঠাৎ এই কথা কেন বলছেন?তারমানে কি উনি বুঝে গেছেন?আমি লাবন্যকে ভালোবাসি বা লাবন্যকে চাই?আর আমি গরিব বলে বা তাদের সমতুল্য নই বলে কি এই যোগ্যতার কথা বলছেন?তখনই বুকটা গিটারের মত বাঝতে লাগল )
–কি হলো আরমান,চুপ কেন!
–কিছুনা আংকেল,আসলে এটা সবার বাবা মা ই চায়,তার মেয়েকে যোগ্য কারও হাতে তুলে দিতে(মন মরা হয়ে গেল)
–হুম,তাই আমি ভাবছি,এখান থেকে বাসায় গিয়ে আমার মেয়েকে আমার একটা প্রিয়,যোগ্য ছেলের হাতেই তুলে দিবো!কি বলো তুমি?
–ভ ভ ভা লো হ হ বে
গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না,এখন কি হবে?ওনি যদি জেনে যায়,আমি লাবন্যকে ভালোবাসি আর ওনি ওনার অধিকার থেকে যদি যোগ্যতার দোহাই দিয়ে লাবন্য নামক ফুল দিয়ে জীবন সাজানোর আগেই,জীবন থেকে মুছে ফেলতে বলেন!তখন তো আমার কিছুই করার থাকবে না,আর আমি তার কথাও ফেলতে পারব না৷তারমানে কি? লাবন্যকে কি আমার জীবন থেকে হারাতে হবে তারপরেই তো………..
চলবে………….