বড় লোকের মেয়ে যখন হুজুর ছেলের প্রেমে পর্ব_১২

আম্মুঃ আমি জানি কেন তুই এই বিয়েতে রাজি না!! (আম্মুর কথায় বুকের ভিতরে একটা কামর মারলো,,, তারপর আম্মু যা বললো তা শুনে আমি তো ডোকের উপর ডোক গিলছি এবার আমার অবস্তা শেষ)

আম্মুঃ শুনেছি তুই নাকি কোন মেয়েকে ভালোবাসিস?

আমিঃ কে কে কে বলেছে তোমাকে?? আর কোন মেয়ে?(তোতলাতে তোতলাতে)

আম্মুঃ আমাদের এখানের সব ছেয়ে টপ বিজনেস ম্যান এর মেয়ে তানজিলার সাথে রিলেশন করিস আর তাই তুই এই বিয়েতে রাজি না আমি কি তোকে ছোট থেকে এই পর্যন্ত বড় করছি এই দিন দেখার জন্য?? এই জন্যই কি তোকে পড়াইতেছি? (একদম রেগে)

আমিঃ…………………(চুপ করে আছি)

আম্মুঃ এই ছিল স্বপ্ন তোকে নিয়ে??

আমিঃ(আমি কিছু বলছি না শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছাড়ছি এক হলো পরিবারের সবার সামনে এত টা অপমান আর দ্বিতীয় টা হল তানজিলাকে হারিয়ে ফেলার ব্যাথা। আমার চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়ছে কিছুক্ষন নিরবতার পর আম্মু আমার চোখের পানি দেখে বলতে লাগলো,)

আম্মুঃ দেখ বাবা আমরা চাইলেও তানজিলাকে বউ হিসেবে আনতে পারবো না,, (এবার শান্ত হয়ে বললো আম্মুর এ কথা শুনে আমি একদম শিউর তানজিলা আর আমার হবে না এত দিন যত টুকো আশা ছিলো ওকে পাবো সেই আশা টুকো ও মাটির সাথে বিলিন হয়ে গেল! ঐ দিকে পরিবারের সবাই অবাক এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি কিছু বলছি না শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে!)

আম্মুঃ কারন ওর বাবা কোন দিনও তার মেয়ে কে আমাদের মত গরিবের ঘরে বউ হিসেবে দিবে না!! কোথায় ওরা আর কোথায় আমরা কি আছে আমাদের বল বাবা?

আমিঃ (এখনো আমি চুপ করে আছি কোন কথা বলছি না এর পরেই আমার জীবনে চলে আসলো এক অন্ধকার আস্তে আস্তে তানজিলাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু কোন ভাবেই ভুলতে পারি না ওর সাথে কাটানো সেই সময় গুলো কে ওর সেই কেয়ার গুলোকে এভাবে আস্তে আস্তে চলে আসলো আমাদের বিয়ে দিন। বিয়ের মাত্র তিন দিন বাকি! এই কয়দিনে আমার খাওয়া দাওয়া একদম কমে গেছে ঠিক মত খাই না, ঠিক মত ঘুমাই না আমার শরির টা একদম শুকিয়ে গেছে,, আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, তানজিলা আমার কাছে তেমন ফোন দেয় নি, আর দিলেও কেমন আছি, কি করছি, এই পর্যন্ত কথা বলে কেটে দিত, আমি নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি আম্মু তো ঠিক ই বলছে, আর তানজিলা তো আমার সাথে ছলনা করছে,, ও কখনো আমাকে ভালোবাসে নি,, কিন্তু নিজেকে যত বুঝাই মন কিছুতেই বুঝে না,, এসব ভাবতেছি তখন ই আম্মু এসে,,)

আম্মুঃ ইমন শোন আজকে তোর বিয়ের শপিং করতে যাবো আর তুইও যাবি তোর ভাইয়া আর দুলাভাইয়ের সাথে!

আমিঃ আম্মু আমি যাবো না, ওরা যাক ওদের পছন্দ ই আমার পছন্দ ওদের যেটা পছন্দ সেটা আনুক আমার কোন অসুবিধা নেই!!

আম্মুঃ না তোকে যেতেই হবে!! ( কি আর করার আম্মুর সাথে কখনো কথায় পেরে উঠবো না!! তাই যেতে রাজি হয়ে গেলাম!)

তারপর আমি ভাইয়া আর দুলাভাই চলে গেলাম শপিং করতে। ভাইয়া আর দুলাভাই আমাকে অনেক বার বলছে পোষাক পছন্দ করতে কিন্তু আমি বলছি, ওদের পছন্দই আমার পছন্দ তার পর শপিং করে বাসায় চলে আসলাম,, বাসায় আসা মাত্রই রোহানের এর ফোন!

রোহানঃ কিরে মামা তুই কই??

আমিঃ বাসায়,, কেন??

রোহানঃ একটু *জায়গায় আয়!!

আমিঃ কেন?

রোহানঃ আরে তুই এত কেন কেন বলিস কেন?? আমি তোকে যা বলছি তা কর, আমি আর বেলাল ওখানে দাড়িয়ে আছি তারাতারি আয়!

আমিঃ আরে কেন আসবো সেটা তো বলবি নাকি??

রোহানঃ আড্ডা দিব তারাতারি আয়!!

আমিঃ না আমি আসতে পারবো না ভালো লাগে না!!

রোহানঃ প্লিজ আয় না,, আড্ডা দিলে তোর মন ভালো হয়ে যাবে প্লিজ আয়!!

আমিঃ আচ্ছা ওকে আসছি (বলে চলে গেলাম ওখানে,, গিয়ে দেখি দুইটায় দাড়িয়ে আছে,, তারপর ওদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম,, এভাবে চলে গেল আরো ২ দিন,,আজ আমার বিয়ে পুরো বাসা সাজানো হলো,, আত্মীয় স্বজনরাও আসতেছে,, বেলাল আর রোহান আব্বু ভাইয়ার সাথে কাজ করতেছে,,, আমার এসব ভালো লাগছে না তাই ছাদে গিয়ে এক কোনায় আসমানের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি, আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,, হঠাৎ মনে হলো কে যেন আমার কাদে হাত রাখলো, পিছনে তাকিয়ে দেখি রোহান, বেলাল আর মেঘলা দাড়িয়ে,, )

রোহানঃ প্লিজ ক্ষমা করে দে মামা! আমরা তোর বন্ধু হয়ে কিছুই করতে পারি নি!!

আমিঃ ধুর কি বলিস, ক্ষমা চাস কেন?? এটা আমার কপালে লেখা ছিল!

রোহানঃ আচ্ছা তুই এতো ভালো কেন? (জড়ীয়ে ধরে কেদে দিলো আমি ও কাদছি পাশে তাকিয়ে দেখি বেলাল আর মেঘলা ও কাদছে!!)

আমিঃ এই তোমরা কাদছো কেন?? প্লিজ কেদো না এটা আমার কপালে লেখা ছিলো!

মেঘলাঃ প্লিজ ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিন,, আমার জন্য আজ আপনার এ অবস্থা।

আমিঃ ধুর পাগলী তুমি তো আমার ছোট বোন, আর বোন ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চায় না,, (কথা বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখি ও কাদছে,)

আমিঃ আচ্ছা বলো তোমার বান্ধুবির বিয়ের কি খবর? (মেঘলাকে বললাম)

মেঘলাঃ এই তো ভাইয়া ভালো,, এই বিয়েতে তানজিলা অনেক খুশি (মেঘলার কথা শুনে আমার চোখে আবার পানি চলে আসলো!!)

আমিঃ ও আচ্ছা ভালো ও খুশি থাকলেই আমি খুশি,, (কথাটা বলার সাথে সাথে চোখের পানি আর আটকাতে পারি নি!! তারপর রোহান বললো)

রোহানঃ তো মামা চল এখনই তো বিয়ের কাজ শুরু হবে তুই এই জামাটা পড়ে নে,, (একটা জামা ধরিয়ে দিয়ে আমি জামাটার দিকে তাকিয়ে দেখেই তো অবাক এটা তানজিলার গিফট দেওয়া জামাটা)

আমিঃ তুই এই জামা কই পেলি?? (অবাক হয়ে)

রোহানঃ কই পামু মানে?? তোর জামা এটা বায়না দিছিস না?? ওটা আমি নিয়ে আসছি!

আমিঃ তো তুই এটা কি ভাবে আনলি??

রোহানঃ আরে মামা শান্ত হ,, আর শোন আজ সকালে আমি তোর রুমে গেছিলাম তোকে খুঁজতে কিন্তু তোকে ওখানে পাই নি, তখন আমি তোর টেবিলের উপর জামার কার্ড টি পাই, তারপর আমি কার্ড টি নিয়ে জামাটা নিয়ে আসছি,, এখন তোকে দিছি তো পড়ে নে তাড়াতাড়ি আংকেল ডাকছে বিয়ের জন্য,,

আমিঃ আচ্ছা চল,, (তারপর জামাটি গায় দিয়ে বিয়ের আসরে চলে গেলাম তারপর আব্বু কাবিন নামায় সই করতে বললো,, আমি কিছু না ভেবেই কাবিন নামায় সই করে দিলাম কার সাথে বিয়ে হচ্ছে, তা ও দেখলাম না,, কারন যার জন্য আমি কাদছি সে তো অন্য কাওকে পেয়ে খুশি ই আছে,, তারপর কাজী সাহেব আমাকে কবুল বলতো বল্লোউ,, যখনই কবুল বলতে বললো তখনই কেন জানি বুকের বাম পাশ টা ব্যাথা করতে লাগলো আমি চুপ করে আছি এর মধ্যে নাকি কাজী সাহেব আমাকে অনেক বার কবুল বলতে বলেছে কিন্তু আমার ঐ দিকে কোন খেয়াল নেই,,, তখন রোহান আমাকে একটি চিমটি দিয়ে বলে,,,,!

রোহানঃ কিরে কবুল বল!!

(তখন আমি কিছু না ভেবেই কবুল বলে দিলাম,, তারপর হাম্মাদ চৌধুরী মানে আমার শশুর আর আমার আব্বু একজন অন্যজনকে মিষ্টি খাইয়ে দিলেন,, আমাকেও অনেকে খাইয়েছেন,,, তারপর বিয়ে শেষ করে যে যার মত আনন্দ করছে, আর আমার মন ভালো না তাই ছাদে চলে আসলাম, ছাদে এক কোনায় এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতেছি,, এত দিন যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি, সে এখন অন্যের ঘরে আর যাকে নিয়ে ভাবছি রাতের আধারে বসে আকাশের মিষ্টি চাদ দেখবো আর বলবো আমার কাছে আকাশের ঐ চাঁদ থেকেও সুন্দর একটা চাঁদ আছে আর ঘুমানোর সময় যে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে সে এখন অন্যের বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে,, এসব ভাবছি আর চোখ দিয়ে পানি ছাড়ছি। হঠাৎ আমি কাহারো আসার আওয়াজ পাচ্ছি,, আমি ঐ দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আসছে আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে দাড়িয়ে আছি,, ভাইয়া আমার কাছে এসে,,

ভাইয়াঃ কিরে তুই এখনে? আমি তোকে পুরো বাসায় খুজতেছি,, আর তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস??

আমিঃ কেন খুঁজতেছো??

ভাইয়াঃ কালকে তোর বউ আনতে যাবো,, তাই কাল আর তোর ঘুম হবে না,, এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়,,,

আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি তুমি যাও,,

ভাইয়াঃ আচ্ছা তারাতারি আয়,, (বলে ভাইয়া চলে গেল)

তারপর আমিও আমার রুমে চলে গেলাম গিয়ে দেখি রোহান আর বেলাল আমার রুমে বসে হেসে হেসে কথা বলছে,, আমি যাওয়া মাত্রই দু টাই একদম চুপ হয়ে গেল!!

আমিঃ কিরে তোরা আমার রুমে?? ঘুমাবি না??

বেলালঃ হুম ঘুমাবো তো,,

আমিঃ তাহলে যা ঘুমিয়ে পড়!!

রোহানঃ আরে মামু আজ তো আমরা তোমার সাথে থাকবো,,

আমিঃ মানে?? তোদের তো রুম আছে, সেখানে যা,,

রোহানঃ না আজ তোর সাথে ঘুমাবো কালকের থেকে তো আর ঘুমাতে পারবো না ভাবি ঘুমাবে সো আজ আমরা ঘুমাবো!!

আমিঃ ওকে ঘুমা তারপর আমরা শুয়ে পড়লাম,, কিন্তু আমার ঘুম আসে না শুধু তানজিলার কথা মনে পড়ে তাই, ভাবলাম একটু facebook এ লগইন করি হয় তো তানজিলাকে একটু ভুলে থাকতে পারবো,,, যে ভাবা সেই কাজ facebook লগইন করলাম,, লগইন করা মাত্রই যা দেখলাম তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলাম না—————

চলবে কি—————–

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *