অপরিচিতা মেয়ে যখন আদুরে বউ পর্ব_১০

আমি এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি জান্নাত টেবিলে নাস্তা বেড়ে দিচ্ছে।আমি গিয়ে চেয়ারে বসলাম।জান্নাত আমাকে ভাজি আর রুটি বেড়ে দিলো।আমি বললাম…..

আমিঃআপনি বসবেন না?

জান্নাতঃআপনি খান তারপর আমি খাবোনি।

আমিঃনা না এটা চলবে না।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।একসাথে খাবো।নাহলে আমি খাবোই না৷

জান্নাতঃআপনিও না।আচ্ছা আসছি।

জান্নাতও দ্রুত গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে আমার সাথে খেতে বসে।আজ জীবনে প্রথম মায়ের হাতের পর অন্যকোনো প্রিয় মানুষের হাতের রান্না খেতে যাচ্ছি।জান্নাতও অধীর আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি একটুকরো রুটি ছিড়ে ভাজি নিয়ে মুখে দিলাম।কিছুটা খাবার পরই জান্নাত খেয়াল করে আমার মুখটা কেমন জানি হয়ে এসেছে।জান্নাত এই দৃশ্য দেখে খুব কষ্ট পায়।সে অসহায় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে…..

জান্নাতঃভালো হয়নি তাইনা?আমি জানতাম আমার দ্বারা রান্না হবে না৷আমি কিছুই পারিনা।

আমি গম্ভীর কণ্ঠে তাকে বললাম…..

আমিঃএ যে সম্পূর্ণ আমার মায়ের হাতের রান্না।আপনি শিখলেন কিভাবে?ওয়াও!

আমি ভীষণ অবাক হয়ে মজা করে খাচ্ছি।আর ওদিকে আমার কথা শুনে জান্নাত পুরো হতভম্ব হয়ে গিয়েছে।সে ভেবেছে রান্না খুব খারাপ হয়েছে দেখে আমি ওরকম করেছি।কিন্তু আসল কাহিনী হলো রান্নার স্বাদটা অনেকটাই আমার মায়ের মতো হয়েছে।জান্নাত তার মাথায় হাত দিয়ে হেসে দেয়।আমি খেতে খেতে তার দিকে তাকিয়ে হাসি। আর বলি…..

আমিঃকি ভয় পেয়েছিলেন নাকি?হাহা।

জান্নাতঃআমি জানি আপনি ইচ্ছা করেই ওমন করেছেন।আপনি খুব খুব পঁচা।

আমিঃহাহা।দাঁড়ান আগে খেয়েনি।তারপর কথা হবে।

আমি আয়েশ করে খাচ্ছি আর জান্নাত অপলক দৃষ্টিতে মন জুড়িয়ে আমার খাওয়া দেখছে।তার কাছে এটা প্রথম।কারন এর আগে কেউ তার রান্না এতো মজা করে খায়নি৷আমি খেতে খেতে বললাম…..

আমিঃআপনি তো ভালোই রান্না পারেন।শুধু শুধু বললেন যে রান্না পারি না৷আপনাকে যে বিয়ে করবে সে অনেক ভাগ্যবান।এতো মজার রান্না সে খেতে পারবে।

জান্নাত মলিন মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে,সে চায় তার রান্না আমার মতো কেউ খাক।কিন্তু তার কপালে সেই গুন্ডাটাই হয়তো আছে।জান্নাত এখন ওসব কথা ভেবে কষ্ট পেয়ে মুহূর্তটা নষ্ট করতে চায় না।তাই সব চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু আমার খাওয়াই দেখছে।আমি খেতে খেতে দেখি জান্নাত খাচ্ছে না।আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম…..

আমিঃকি ব্যাপার শুধু আমাকে দেখলে কি পেট ভরবে?খেতে হবে তো।আপনিও খাবার নিন।

জান্নাত ভীষণ লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে বসে থাকে।আমি মুচকি হেসে নিজেই তাকে খাবার বেড়ে দিয়ে বলি…..

আমিঃআপনি লজ্জা পেলে আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগে।

এরপর আমি আর জান্নাত মজা করে সকালের নাস্তাটা করলাম।নাস্তা শেষ করে আমরা দুজন হল রুমে বসে আছি।আমি মনে মনে ভাবছি আজ সারাদিনে কোথায় কোথায় যাবো।জান্নাত লজ্জাসিক্ত হয়ে আড়চোখে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো।আসলে তার মনে গতরাতের আমার বলা কথাগুলো এখনো লেগে আছে।গতরাতে চাইলে অনেক কিছুই হতে পারতো,কিন্তু কিছুই হয়নি।আমি হঠাৎ করেই জান্নাতকে জিজ্ঞেস করলাম…..

আমিঃআপনার কেমন জায়গায় ঘুরতে ভালো লাগে?

জান্নাত তার আপন ভাবনায় ডুবে ছিলো।আমার প্রশ্ন শুনে সে থতমত খেয়ে বলে…..

জান্নাতঃআ….আম….কি?

আমিঃবলেছি আপনার কেমন জায়গা পছন্দ?যেখানে গেলে আপনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন?

জান্নাত কিছুক্ষণ ভেবে বললো…..

জান্নাতঃখোলামেলা সবুজ প্রকৃতির মাঝে।যেখানে কোনো কোলাহল নেই।একদম নিরিবিলি,শুধু পাখিদের ডাক আর ফ্রেশ অক্সিজেন।এমন কোনো জায়গা কি আছে রাশেদ সাহেব?

এবার আমি একটু চিন্তায় পড়লাম।অনেকক্ষন ধরে ভাবলাম কিন্তু এমন কোনো জায়গা আছে কিনা মনে পড়ছে না৷তাই ফোনটা বের করে নেটে খোজাখুজি শুরু করলাম।পাশ থেকে জান্নাত বলে উঠলো…..

জান্নাতঃআরে আপনি এতো চিন্তিত হইয়েন না।এমন জায়গা কোথাও নে…..

আমিঃপেয়েছিইইই…..

জান্নাতঃকি!পেয়েছেন?কোথায়?

আমিঃবলবো না,আপনাকে ডিরেক্ট নিয়ে যাবো।আপনি সাওয়ার নিয়ে রেডি হন তাড়াতাড়ি।যাক এতো খোঁজাখুঁজির পর পেলাম।মাথাটা পুরো হ্যাং হয়ে গিয়েছিলো।

জান্নাত অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।যেনো আমিই তার থেকে বেশি খুশি হয়েছি।আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে তাকে এভাবে দেখে বললাম…..

আমিঃওমা! আপনি বসে আছেন কেন?দৌড় দেন৷নাহলে দেরি হয়ে যাবে৷জায়গাটা একটু দূরে।তাও সমস্যা নেই।

জান্নাতঃযাচ্ছি যাচ্ছি…..

বলেই জান্নাত উঠে গেস্ট রুমে যেতে নেয়।কিন্তু হঠাৎই সে থমকে দাঁড়ায়৷আবার আমার সামনে চলে আসে।আমি তার দিকে তাকিয়ে পুরো অবাক।সে মুখটা সম্পূর্ণ মলিন করে আছে।আমি অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম…..

আমিঃআবার কি হয়েছে আপনার?

জান্নাতঃআপনি কিছু একটা ভুলে যাচ্ছেন রাশেদ সাহেব।

আমি আরও অবাক হয়ে বললাম…..

আমিঃকি ভুলে যাচ্ছি আমি?

জান্নাতঃআপনি যে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেন,নিচে দারোয়ান চাচার সামনে থেকে আমাকে নিয়ে কিভাবে যাবেন?সে তো আমাদের একসাথে দেখে ফেলবে।আর এই দিনের বেলা লুকিয়েও যাওয়া আসা করা যাবে না।তাহলে কিভাবে কি?

আমি জান্নাতের কথার শুনে পুরো স্তব্ধ হয়ে যাই।আসলেই তো,জান্নাত ঠিকই বলেছে৷এই দিনের বেলা দারোয়ান চাচার সামনে থেকে কিভাবে লুকিয়ে যাবো?সাথে আবার বাইকটাও আছে।এ কেমন ঝামেলায় পড়লাম আমি!জান্নাতকে কথা দিয়েছি তার শেষ ইচ্ছাটা আমি রাখবোই।তাহলে এখন কিভাবে আমি কি করবো!মাথা পুরো আগুন হয়ে যাচ্ছে ভাবতে ভাবতে।আমি আর ভাবতে পারছি না।উঠে দাঁড়ালাম।জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে বললাম…..

আমিঃআমি নিচে যাচ্ছি তার সাথে কথা বলতে।আপনি এই ফাকে রেডি হতে থাকেন।আমরা যে প্ল্যান করেছি সেই অনুযায়ী সব হবে।

জান্নাতঃআপনি পাগল হয়েছেন!আপনি আর আমি এভাবে একসাথে…জানাজানি হলে তুলকালাম অবস্থা হবে৷না না আপনি বাদ দিন এসব।আমি কোথাও যাবো না।আমি এখানেই ভালো আছি।

আমি জান্নাতের কাছে এসে তাকে ধরে চোখেচোখ রেখে বললাম…..

আমিঃআমি আপনাকে কথা দিয়েছি আপনার আবদারটা পূরণ করবোই।সো এতে যদি আমাকে সমস্যায় পড়তেই হয় হোক।আমি তার কেয়ার করিনা।আপনি রেডি হন আমি আসছি।

বলেই বাইরে থেকে লক করে সোজা নিচে চলে আসলাম।মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি।একমাত্র তিনিই এই মহা বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা করতে পারেন।

আমি লিফট দিয়ে নিচে এসে আস্তে আস্তে দারোয়ান চাচার কাছে গেলাম।তিনি বসে বসে পান খাচ্ছিলেন আর সবাইকে দেখছিলেন।হঠাৎ আমাকে তার কাছে দেখে তিনি অবাকও হন আবার খুশিও হন৷তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন…..

দারোয়ান চাচাঃআরে রাশেদ বাবা!আজকে এহনো অফিসে যান নাই যে?কোনো সমস্যা অইছে নি?

আমিঃনা না চাচা কিছুই হয়নি।আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিলো।

দারোয়ান চাচাঃহ হ কন কন।

আমিঃচাচা আগে ওয়াদা করেন আপনি আমাকে নিজের ছেলের মতো করে কথা গুলো শুনবেন।সব শুনে আপনার যদি মনে হয় আমি ভুল করেছি তাহলে আপনি গুরুজন হয়ে আমাকে শাস্তি দিয়েন।

দারোয়ান চাচা এবার একটু চিন্তায় পড়লেন।তিনি কৌতূহল হয়ে জিজ্ঞেস করলেন…..

দারোয়ান চাচাঃবাবা কি কতা তাড়াতাড়ি কইয়া লাও।সমস্যা নাই।

এরপর আমি চাচাকে জান্নাতের সম্পর্কে সবকিছু খুলে বললাম।তার পরিবার,কেন পালিয়ে আসা সবকিছু।প্রায় আধা ঘণ্টা লাগলো তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলতে৷আমি ভিতরে ভিতরে খুব ভয় পাচ্ছিলাম যে চাচা সবকিছু কিভাবে নিবে৷তিনি সবকিছু শুনে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন।আমি তার রিয়েকশন দেখার জন্য অপেক্ষা করছি আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি।তিনি দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন…..

দারোয়ান চাচাঃবাপ সমাজের চোহে হয়তো এইডা খারাপ দেখাইবো যে তুমি একটা মাইয়ার লগে এইভাবে আছো।তবে আমার চোখে তুমি ঠিক করছো।যেই মাইয়াডা এইটুকু জীবনে এতো কষ্ট সহ্য করলো তারও তো একটু মন চায় জীবনডারে উপভোগ করতে।তুমি কোনো চিন্তা কইরো না।ওরে আমার নিজের মাইয়া মনে কইরা তুমি ওর খেয়াল রাইখো।আমার মাইডার দায়িত্ব তোমার হাতে দিলাম।যাওয়ার সময় একটু দেহা কইরা যাইও।আমিও মাইয়াডারে একটু দেখতে চাই।

আমিঃঅসংখ্য ধন্যবাদ চাচা।আপনি বাঁচালেন আমাকে।আমি অবশ্যই আপনার সাথে তাকে দেখা করায় নিয়ে যাবো।

দারোয়ান চাচাঃঠিক আছে,খুশি থাকো।

এরপর চাচার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিকে আসতে নিলাম।জান্নাতকে দ্রুত খুশির খবরটা দিতে হবে৷আসলে জান্নাতের জীবনের গল্পটা শুনলে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ই গলে যাবে৷তার মতো অসহায় মেয়ে বোধহয় আর একজনও নেই।

যাইহোক আমি আবার বাসায় চলে আসি।এসে লক খুলে ভিতর ঢুকে দরজা দিয়ে খুশিতে সোজা আমার রুমে চলে আসি।ভাবি জান্নাত হয়তো আমার রুমে অপেক্ষা করছে বারান্দায়।আমি যেই আমার রুমে ঢুকি আমি দেখি জান্নাত…..

চলবে…..

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *