বসের দেমাগি মেয়ে যখন রোমান্টিক বউ পর্ব_০৬



মেসেজ দেখা শুরু করলাম৷হঠাৎ ই একটা আইডির দিকে চোখ গেল৷আর আমি তো হেব্বি অবাক হয়ে গেলাম৷
কারন আইডিটা ছিল ডিএক্টিভেট৷আর আইডিটা ছিল একটা মেয়ে আইডি৷আইডির নাম মিম চৌধুরী৷ আর ওই আইডি থেকেই এত্তগুলা মেসেজ৷আমি তখন মেসেজগুলো দেখা শুরু করলাম,মেসেজ গুলো ঠিক এমন ছিল,

–ওই আপনার কি হইছে?ফেসবুকে আসছেন না কেন?
কি হইছে প্লীজ বলুন৷
আপনার কি কোনো সমস্যা?
আপনি গল্প দিচ্ছেন না কেন?
আপনি জানেন না?আপনার গল্প আমার অনেক ভালো লাগে,
আপনার কিছু হয়নি তো?
আপনি ঠিক আছেন?
এমন কয়েক হাজার মেসেজ হবে৷আমি মেসেজগূলো পড়তে পড়তে গলা শুকিয়ে ফেলছি কিন্তু মেসেজ তো শেষ হয়না৷
তখনই মনের ভিতর ভাবনা শুরু হলো,মানুষ কি গল্পের সাথে আমাকেও এত ভালোবাসত?কই কখনোই তো কেউ আমাকে মেসেজ দিয়ে বলেনি আপনি কেমন আছেন?কি করছেন?
তারমানে কি এতেও ওদের স্বার্থ আছে?
যতদিন গল্প দিলাম ততদিন একবারও আমার খোজ নিলো না,আর যখনি গল্প না দিয়ে হারিয়ে গেলাম তখন গল্প না পেয়ে আমাকে মেসেজ করছে৷খালি স্বার্থবাজি৷পরক্ষনেই মনে হলো ,যদি আমাকে ভালোই না বাসে ,তাহলে আমার গল্প পড়বে কেন?
তারপরও ভালোই লাগছিলো কেন না,পৃথিবি থেকে যদি কখনো হারিয়ে যাই,অন্তত্য একটু খোজ নেওয়ার মানূষও আছে৷
আর তখন আবার ওই মেয়ের কথাটা মাথায় আসল৷ওই মেয়ে এত মেসেজ কেন করল আমায়!আর
শেষমেষ মেসেজ পড়া বন্ধ করে দিলাম৷ঠিক তখনই আমার খেয়াল হলো মেয়েটা একটা ফোন নাম্বার দিয়ে গেছে৷আর লেখা আছে আপনি ফেসবুকে নাই,তাই আমিও ফেসবুক থেকে চলে গেলাম৷যদি কখনো ফেসবুকে আসেন তাহলে এই নাম্বারে একটা মিসড কল দিয়েন৷
আমার কেন জানি ফোন দিতে একদমই ইচ্ছা করল না৷
মাথায় ভাবনা চলে আসছে ফোন দিবো নাকি দিবো না?
আর তখনই পিছন থেকে লাবন্য আসল৷আর বলা শুরু করল

–এই যে মি. আরমান,সেই কখন থেকে আপনাকে খুজতাছি(লাবন্য)
–বাব্বাহ,তো মিষ্টার হলাম কবে থেকে?
–প্লিজ এভাবে বলে আমাকে আর লজ্জা দিও না৷আমি তো বলেছি আমি ভুল করেছি
–তো বলেন কি জন্য আমাকে খুজেছেন?
–আমার সাথে আজ একটু ঘুরতে যাবে?
–আজব তো!
–আজবের কি হলো? প্লিজ না করো না৷প্লীজ প্লীজ
তখনই পিছন থেকে লাবন্যর বাবা এসে ববে উঠল

–আরমান,বাবা তুমি ওকে নিয়ে একটূ ঘুরাঘুরি করো,তোমার মনটাও ভালো হবে,ওর মনটাও ভালো হবে(লাবন্যর বাবা)
–কিন্তু আংকেল(আমি)
–কোনো কিন্তু নেই,আমার কথা তুমি রাখবে না?(লাবন্যর বাবা)
–ঠিক আছে আংকেল,আমি যাবো
ঠিক তখনই লাবন্য লাফিয়ে উঠল৷আর বলল
–আরমান,তাহলে তৈরি হও,

বলেই ও চলে গেল৷ও চলে যাবার পর মিম নামের ফেসবুকের ওই মেয়েটার কথা মনে পরতে লাগল৷মেয়েটা কেন এত মেসেজ করল আমায়?আর ফোন নাম্বারই বা কেন দিলো?
তারপর বেশি কিছু আর ভাবতে পারলাম না৷কারন কিছুক্ষনের ভিতর বেরুতে হবে৷আর ভাবারও দরকার নেই৷কে না কে?অযথা ফোন দিয়ে লাভ নেই৷একটু পরই লাবন্যর সাথে বাইরে বের হলাম৷লাবন্য গাড়ি ড্রাইব করছে৷গাড়ির জানালা দিয়ে বাতাস ভিতরে আসছে৷আর ওর চুল গূলো এলোমেলো করে দিচ্ছে৷কেন জানি ওর প্রতি এক অদ্ভুদ ভালোলাগা কাজ করা শুরু করে দিল৷ওকে অনেক মায়াবি লাগছিল৷লাবন্য চুপচাপ ড্রাইব করছে আর আমি ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম৷হঠাৎ খেয়াল করলাম লাবন্য গাড়ির ভিতরের আয়না দিয়ে একটু পর পর আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে তখন নিজে অনেকটাই লজ্জায় পড়ে গেলাম৷ও দেখে ফেলেনি তো?ওর দিকে যে এমন করে তাকিয়ে ছিলাম?আল্লাহ তুমি বাঁচাইয়ো।
লাবন্য একটা পার্কে নিয়ে গেল৷আর একটা গাছের নিচে দূজনেই বসলাম৷হঠাৎ লাবন্য বলে উঠল..

–আচ্ছা আরমান!তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো.
–হুম বলেন মেম
–এই দেখো,এখন কিন্তু আমি তোমার মেম না,আর এখন মেম বলবাও না
–তাহলে কি বলবো?
–বন্ধু বলবা৷আজ থেকে আমি তোমার বন্ধু
–মাথা ঠিক আছে আপনার?
–হূম কিন্তু কেন?
–আপনি কি আবোল তাবোল বলছেন এগূলো?আমি আপনার একজন কর্মচারি বন্ধু হবো কিভাবে?
–প্লিজ এমন করো না,তুমি বলো আমাকে তোমার বন্ধু বানাবে একটু হাসিমুখেই কথাটা বলল।
ওর হাসিমুখটা দেখে তো আরও ক্রাস খেলাম৷একটা মানুষের হাসিতে এত জাদুও আছে নাকি?কেন জানি অনেক ভালো লাগছিল কিন্তু আগে এত ভালো লাগেনি কেন?তখনই বললাম
–হুম বন্ধু হতে পারি তবে শর্ত আছে
–কি শর্ত?
–প্রতিদিন আমার সামনে মিনিমাম ৩০মিনিট হাসতে হবে,যদি পারেন তাহলে আমি রাজি
–কিহহহ,হাসতে হবে?এটা কোনো ব্যাপারই না৷
–তাহলে এখনি একটু হাসেন
–হুম কিন্তু আমাকে এখন থেকে অফিসেও আর বাসায় ও তুমি করে বলতে হবে
–হুম৷তো বলবো
–আচ্ছা,এবার একটু হাসো,তবে চুল গূলো একটু খোলা রেখে হাসবা
–আরে অযথা হাসা যায় নাকি৷তার চেয়ে ভালো তুমি কিছু একটা হাসির কথা বলো

তখন একটা জোকস বললাম,আর লাবন্য একটু হাসি দিলো ,আর সত্যিই তখন নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ও যখন হাসছিলো ,তখন বাতাসে ওর চুলগুলো এলেমেলো হয়ে যাচ্ছিলো৷আর সেই দৃশ্যটা আমাকে একদম ওর প্রেমে ফেলে দিচ্ছে৷
যাই হোক যেদিনের মত বাসায় এসে পড়লাম৷আর পরেরদিন কাজে গেলাম৷
ঠিকঠাক মত কাজ করছিলাম৷আর কোম্পানি আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো হয়ে গেছে৷অনেক উন্নতও হয়েছে৷
৬মাস পর,

আমাদের কোম্পানির আগের মত আরও কিছু প্রজেক্ট আর পার্টির আয়োজন করা হলো৷এবারও সমস্ত অর্ডার আমাদেরই পেতে হবে৷
বরাবর আগের মতই লাবন্য অনেক চিন্তিত হয়ে গেল৷
আর তখনই বললাম
–কি হইছে?তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন?(আমি)

–আরমান,এবার যদি পার্টিদের কাছ থেকে অর্ডার আমরা পেয়ে যাই,তাহলে আমরা অনেক লাভবান হবো৷কারন এবার অনেক বড় বড় কোম্পানি সেই পার্টিতে আসবে

–আরে চিন্তার কিছুই নেই,যদি আমাদের ভাগ্যে থাকে তাহলে আমরাই পাবো৷আর ভাগ্যে না থাকলে তো কিছুই করার নেই৷
–আরমান,আমাদের এবারও অর্ডারগুলো পেতে হবে,আর তুমি সেটা পারবে
–আমি?সেটা কিভাবে?
–তুমি আগের মতই তুমি নিজে প্রজেক্ট আর প্রেজেন্টেশন করবে৷
–আরে সবসময় কি তেমন করা যায় নাকি?ওটা তো ভুলে পেয়ে গেছি৷
–কিচ্ছু জানিনা,তোমাকে পেতেই হবে৷
-হূম,আমি আমার সর্বোচ্ছ চেষ্টা করবো৷
বরাবর আগের মতই সমস্ত পার্টিদের কাছ থেকে আমরাই অর্ডারগূলো ভাগ্যগুনে পেয়ে গেলাম৷আর তখন সত্যিই অনেক খুশি লাগছিলো৷পার্টিও হয়ে গেছে।
পার্টি শেষে লাবন্য আমার সামনে এসে বলে উঠল
–আরমান,তুমি তো দেখছি একদম ফাটিয়ে দিছো,.
-আসলে আমার কোনো অবদান নেই,সবই আল্লাহর ইচ্ছা,হয়ত আল্লাহ চাইছে,অর্ডার টা যেন আমরাই পাই
–হুম আল্লাহ তো চাইছেই৷আর তোমার কথা তো একেবারেই প্রশংসা না করে পারছিই না
–এত প্রশংসার দরকার নেই৷

–আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবে আরমান?
–হুম বলো
–তুমী কি সত্যিই লেখাপড়া করো নি?নাকি আমাদের কাছে লুকাচ্ছো?তুমি কোনোভাবেই মূর্খ হতে পারো না৷তোমার আজকের প্রেজেন্টেশন সেই কথা একদমই বলছে না
–দেখো লাবন্য,তুমি ভুল ভাবছো৷আর এই বিষয়ে আমাকে কিছু বলবানা৷যেটা বলছি সেটা শুনো
-হুম বলো
–আমাদের কোম্পানি এখন আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে,ভালো ভালো পার্টিরা আমাদের অর্ডারগূলো দিচ্ছে,তাই তো?
–হুম কিন্তু হঠাৎ এই কথা কেন?
–আমাদের কোম্পানি যেহেতু ভালোর দিকে যাচ্ছে তাহলে আমার একটা কথা রাখবে?
তখনই লাবন্যর বাবা এসে উপস্থিত.
–কি কথা আরমান বলো?(লাবন্যর বাবা)
–আসলে আংকেল,ওপস এটা তো অফিস,মনেই ছিল না,,আসলে বস,আমাদের কোম্পানি তো দিন দিন ভালো পজিশনে যাচ্ছে ,তাই বলছিলাম কি,সব শ্রমিকদের যদি এক্সট্রা কিছু টাকা বাড়িয়ে দিতেন,তাহলে শ্রমিকগূলো অনেক খুশি হবে,আর তারাও ঠিকমত কাজ করে আমাদের লাভ আরও বাড়িয়ে দিবে

–বাবা,আরমান কিন্তু একদম ঠিক বলছে,শ্রমিকরা এক্সট্রা কিছু পেলে,তারা মালিকের ওপর খুশি হবে,আর কাজে আরও বেশি আগ্রহী হবে(লাবন্য)
–তাহলে তাই হবে৷আর তোমার বেতনও এখন থেকে বেড়ে ৫০হাজার টাকা হলো,এবার খুশি তো?(লাবন্যর বাবা)
-না না,আমার এত টাকার দরকার নাই,আগের টাকাই,আমি যথেষ্ট খুশি(আমি)
–তা বললে তো হবে না,তোমার বেতন সামনে আরও বেড়ে যাবে,আপাতত ৫০ই থাক(লাবন্যর বাবা)
–কিন্তু আংকেল থুক্কু,বস,এটা কিন্তু ঠিক না
–বাদ দাও!যেটা বলেছি ওইটাই ফাইনাল৷

সেই সময় আমাদের অনেক অনেক লাভ হয়েছিল৷আর শ্রমিকদের বাড়তি কিছু টাকা দেওয়ায় তারা কাজে আরও আগ্রহি হয়ে গেল৷আর আমাদের লাভের অংশটাও দিন দিন বাড়তেই লাগল ৷আর আমিও প্রতিমাসে বন্ধুর মাধ্যমে বাসায় টাকা পাঠাইতাম৷কিন্তু ইদানীং বাসায়ও নাকি সন্দেহ শুরু করছে৷আমার বন্ধু এত টাকা পায় কই?আর টাকা দেয় কেমনে?বন্ধুকে কোনমতে বুঝ দিতাম যেন কোনোভাবে চালিয়ে নেয়৷আর এই জায়গায়
কাজ করতে করতে ,কখন যে লাবন্যকে অনেক ভালোবেসে ফেললাম বুজতেই পারিনি৷এখানে প্রায় ৫টা বছর কেটে গেল৷এই ৫বছরে লাবন্যর সাথে এত ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল যে,ও আমাকে ছাড়া আর আমি ওকে ছাড়া থাকার কথা চিন্তাও করতে পারিনা৷
কিন্তু ও শুধু আমাকে বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবত,আর আমি দুটোই ভাবতাম৷আর ওর চাল চলন দেখে মনে হয় ও নিজেও আমাকে ভালোবাসে,এইত সেদিনের ঘটনা৷ওকে না বলে কোম্পানির একটা বন্ধুর বাসায় গেলাম৷আর সেখানে গিয়ে পরলাম আরেক জামেলায়৷ফোনটা ভুলে অফিসেই রেখে এসে পরলাম৷পরে আর লাবন্যকে বলতেও মনে ছিলনা৷পরেরদিন বাসায় যেতেই লাবন্যর সামনে পড়লাম৷আর তখনই দৌড়ে সামনে আসল

–এই,তুমি কই ছিলে?ফোন কেন নিয়ে যাও নি,তুমি ঠিক আছো তো?তোমার কিছু হয়নি তো(কান্না করে দিছে)
–এই তুমী কান্না করো কেন?আর কান্না করার মত কিছুই হইছে নাকি(আমি)
–কিছু হইছে মানে?তোমার কোনো খোজ পাচ্ছিনা,আর আমি এইদিকে চিন্তায় শেষ,কই ছিলে বলো
–একটা ফ্রেন্ডের বাসাস গিয়েছিলাম৷
–আমাকে কেন বলো নি(কান্না করেই যাচ্ছে)
–আরে বোকা নাকি তুমি?কান্না করছো কেন?
–তুমি জানো কাল সারাটা রাত ঘুমাতে পারিনি,শুধু মাথায় একটা কথাই ঘূরপাক খাচ্ছিলো,তোমার কিছু হইছে কিনা
–আরে!এতে এত চিন্তার কি আছে?
–হুম ঠিকই তো৷৷৷৷ তুমি কি বুঝবা?কখনো আমাকে বুঝার চেষ্টা করেছো?আমি তোমার কাছ থেকে কি কি আশা করি?বুঝো?বুঝোনা৷কারন আমাকে তো বুঝার চেষ্টাই করো না৷আর চেষ্টা কেনই বা করবে?কোনো দরকার আছে?কোনো দরকার নেই।

তখন কি বলব বুঝতেই পারছিনা৷ লাবন্য আমাকে কি বোঝার কথা বলছে?আর আমি কি বুঝতে পারছিনা?তারমানে কি ও আমাকে ভালোবাসে?আর এজন্যই কি এমন করে?
হুম এটাই ও আমাকে ভালোবাসে৷
যাই হোক সময় বুঝে একদিন প্রপোজ করে ফেলবো৷আর পাগলিটাকে বউ করে ফেলবো কিন্তু সামনে আগে একটা ভালো দিন আসুক৷
সেদিনের পর হঠাৎ একদিন লাবন্য আমাকে বলল

–আরমান,আমাদের কোম্পানি তো অনেক উন্নত হইছে আর শ্রমিকরাও অনেকটা স্বাবলম্বি হইছে তাই না?
–হুম কিন্তু হঠাৎ এই কথা কেন?
–কারন সবটাই তোমার জন্য সম্ভব হইছে,আর তোমার বুদ্ধিতেই কোম্পানি এত ভালো একটা পজিশনে আসছে
–আরে এগুলো বলার দরকার কি?বাদ দাও না
–হুম বাদ দিবো,আমরা তো প্রায় অনেকদিন ধরেই কোম্পানিতে একসাথে কাজ করে আসছি তাই না?
–হুম,তো কি হইছে?
–কিছুনা,আমি বলছিলাম কি কাজের পাশাপাশি যদি শ্রমিকদের নিয়ে যদি একটা পিকনিকের আয়োজন করি,সবাই একসাথে অনেক মজা করতে পারব ,তাই না?
–হুম,কিন্তু এত মানুষকে সিকিউরিটি কি আমরা দিতে পারব?
–হুম পারব না কেন?
–দেখো,হাজার হাজার মানূষকে নিয়ে এটা ভাবা ঠিক না,কারন বলাটা যত সহজ ,করাটা তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন
–হুম,কিন্তু..
–কিন্তু কি?

–আসলে সত্যি বলতে ,তোমার সাথে অনেক ঘুরতে আর কিছুটা সময় একা কাটাতে চাচ্ছি,আর তাই ওই টা বলেছি
–দুরর এটা কোনো কথা হলো?সারাদিনই তো তোমার সাথে থাকি ,তো এতে কি হচ্ছে না?যা বলার বলতেই তো পারো
–তুমি না আসলেই,থাক বলে লাভ নাই,যে বুঝেও বুঝে না,তাকে তো আর বলে লাভ নাই,
–আমি কি বুঝিনা?
–থাক কিছুনা
-হুম,আমি ভাবছিলাম আংকেলসহ বাড়ির সবাই মিলে যদি কক্সবাজারে ঘুরতেই যাই কেমন হবে?
–ওপসসস, অন্নেক অনেক ভালো হবে,সত্যি যাবে তো
–হুম যাবো,
–তো কবে যাইবা?
–সামনের সপ্তাহেই যাবো,
–হুররে,খুব মজা হবে,.

কথাটা বলেই লাবন্য একটা হাসি দিল৷আর হাসিটা দেওয়া মাত্রই আমার মনের ভিতরে একটা অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করতে লাগল৷ও যখন হাসে ওর মূখটা এতটা মায়াবী হয়ে যায়,যে আমি তখন একটা পাগলের মত হয়ে যাই৷ওর হাসি সত্যিই আমাকে পাগল করে দেয়৷মানুষ হাসলে এত সুন্দর লাগে ,সেটা লাবন্যকে না দেখলে কখনোই বুঝতে পারতাম না৷

পরের সপ্তাহে অফিসের সমস্ত কাজ কর্ম শেষ করে আমি,লাবন্যর বাবাসহ সবাই মিলে আমরা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম৷সেদিন রওনা দেবার আগে বারান্দায় একা একা বসে রইছি আর বার বার বলা শুরু করলাম
“”শালার মাইয়া মানুষগুলো যে কেন এমন বুঝিনা,২-৩ঘন্টা লাগে খালি সাজুগুজু করতেই৷সেই কখন যে ওনি তৈরি হতে ভিতরে গেছে এখনও কোনো খবর নেই৷আর এই দিকে আমার বসে থাকতে থাকতে কোমর ব্যথা হয়ে যাচ্ছে,এই মাইয়াগূলো যে কবে ঠিক হইবো আল্লাহই জানে৷হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার কাদে হাত রাখল৷আর তখনই পিছনে তাকালাম৷তাকানোর পর তো আমি হা করেই হইলাম৷
এটা আমি কাকে দেখছি?মানুষ না পরি?এত সুন্দর লাগছে লাবন্যকে যা হয়ত কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর ৷ইসসস আমার পরিটা কত্ত সুন্দর ৷

–আরে এই আরমান আরমান(লাবন্য)
–(আমি হা করেই আছি)
–আরে এই আরমান(ধাক্কা দিয়ে)
আর তখনই নিজের হুস ফিরল
–কি হইছে?ধাক্কা দিচ্ছো কেন?
–কোন দেশে চলে গেছো,সেই কখন থেকে ডাকছি৷চলো এমনিতেই দেড়ি হয়ে যাচ্ছে
–হুম৷চলো

তারপরই আমরা গাড়িতে উঠলাম৷আর আমি তখনও লাবন্যর দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছিলাম না৷ওকে কত্ত সুন্দর লাগছে৷মন চাচ্ছে এখনই প্রপোজ করে ফেলি৷কিন্তু তা আর হলো না৷পরক্ষনেই মনে হলো কক্সবাজারে গিয়েই ওকে প্রকৃতির সামনে চিৎকার করে প্রপোজ করবো৷
গাড়িতে উঠার পরই দেখলাম লাবন্য অন্য একটা গাড়িতে উঠল
ধুররর মনটাই খারাপ হয়ে গেল৷আমার পাশে রহিম চাচা বসে আছে৷ভাবছিলাম হয়ত লাবন্য অমার পাশে এসে বসবে আর আমি তখন লুকিয়ে লুকিয়ে ওর মায়ামুখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব৷কিন্তু তা আর হলো না৷মুহূর্তেই লাবন্যর প্রতি খুব রাগ হতে লাগল৷কি এমন হত আমার সাথে বসলে?ভাবতে ভাবতেই নিচের দিকে তাকিয়েই রইলাম৷হঠাৎ পিছন থেকে আমার কাধে হাত পরল৷

কাদে হাত দিতেই
–কাধ থেকে হাত সরাও রহিম চাচা(নিচের দিকে তাকিয়েই)
–(আবারও হাত দিল)
–দেখো রহিম চাচা,হাতটা সরাও,
বলেই হাতটা নামিয়ে দিলাম,তখনও পিছনে তাকালাম না
–(আবারও কাধে হাত দিল)
তখন অনেক রাগ উঠে গেল,এমনিতেই মনটা খারাপ,লাবন্য আমার পাশে বসল না৷আমি আবারও নিচের দিকে তাকিয়ে রাগে ফূলতে লাগলাম৷আর হাতটা সরিয়ে দিলাম৷
আর তখন আবারও গায়ে হাত দিতেই

-একদম মেরে ফে ফে ফফফফফফফ(পিছনে তাকাতেই তোতলা হয়ে গেলাম)
–কি হলো,আমাকে মেরে ফেলবা?(লাবন্য)
–আরে তুমি?
-হুম,মারো আমায় ?কি হলো মারছো না কেন?
–তোমাকে কি মারা যায় নাকি?আর আমি তো একদম অবাক হয়ে গিয়েছি,পুরাই ভুত দেখার মত,
–হুম আমি তো ভুতই, হি হি হি
–তুমি ভুত না,তুমি পেত্নি
–হুম আমি পেত্নি,আর এখন তোমার রক্ত খাবো ,হি হি হি

লাবন্য খিলখিল করে হাসতে লাগল৷আমার সাথে এমন করায় একটু রাগ উঠে গেল৷
মন চাচ্ছে তখন ওর গালটা টিপে দেই নয়ত নাকটা বাকা করে দেই৷পেত্নিটা একদম পেত্নির মত হাসছে ৷তখনই গাড়ি ছেড়ে দিল৷আমি আর লাবন্য সামনের গাড়িতে করে আর লাবন্যর বাবা আর বাকিরা পিছনের গাড়িতে করে যাচ্ছে৷
লাবন্য জানালার কাছে বসেছে আর আমি তার পাশে৷ও জানালা দিয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছিল৷আর আমি করছিলাম প্রকৃতির মাঝে এক মায়াবির রুপ৷
জানিনা ইদানীং ধরে লাবন্যর প্রতি এত ক্রাশ খাচ্ছি কেন?আর আল্লাহই জানে এত ক্রাশ খাইতে খাইতে কখন জানি বাশ খাইয়া ফেলি৷
গাড়ি চলতে লাগল তার আপন গতিতে৷রাত হয়ে গেল৷গাড়িতেই খাবার ছিল৷আর আমরা গাড়ির ভিতরেই খেয়ে নিলাম৷অনেক রাত হয়ে গেল৷তখনও আমরা গাড়িতেই৷আর লাবন্য হঠাৎ আমার কাধে মাথা রাখল৷আমি তো তখন চান্দের দেশে চলে গেছি৷যেন আমি স্বপ্ন দেখতেছি,এই প্রথম লাবন্য আমার এত কাছে এসেছে৷তাও এই ভাবে৷
আস্তে আস্তে কখন যে লাবন্য আমার কাধেই ঘুমিয়ে পড়ছে খেয়ালই করিনি৷সারারাত ওর মায়া মাখা মুখের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিলাম৷হয়ত আমাকে যেকেউই পাগল বলবে কিন্তু আমি সত্যিই এই কয়দিনে লাবন্যর জন্য মাত্রাতিরিক্ত পাগল হয়ে গেছি৷ওর রুপের চেয়ে ওর হাসির প্রেমেই পড়ে গেছি৷
যাই হোক পরেরদিন সকাল সকাল আমরা কক্সবাজারে চলে গেলাম৷
আমরা একা ভালো নামি দামি একটা হোটেলে উঠলাম৷ আর সবাই যার যার রুমে চলে গেলাম৷এত জার্নি করে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম৷কখন যে ঘূমিয়ে পরছি বুঝতেই পারিনি৷হঠাৎ বিকেল বেলা লাবন্যর ডাকে ঘূম ভাঙল৷

–এই চলো সমুদ্র সৈকত থেকে একটু ঘুরে আসি৷
–হুম চলো৷
মনে মনে ভাবতে লাগলাম৷আজকেই ঘুরাঘুরির সময় লাবন্যকে প্রপোজ করে ফেলব৷ হি হি হি

চলবে…………..

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *