পাশের বাসার মেয়ে যখন রোমান্টিক বউ পর্ব-০৭

ঐশী আমার পিছু পিছু আসতে লাগলো, মনে কষ্ট হলেও শক্ত হয়ে ঐশীর সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম, এভাবে দাঁড়াতে দেখে ঐশী কেমন যেন অবাক হয়ে গেলো,
— এই তোর প্রব্লেমটা কি বল তো? (আমি)
— কি আবার প্রব্লেম যার যেটা প্রব্লেম সেটা তো তুমি জানো। (ঐশী)
— আমি কোনো কিছু জানি না। আমাকে আর ডিস্টার্ব করবি না প্লিজ।
— ওহ ওকে।

এটা বলে ঐশী আমার চোখের সামনে থেকে এক নিমেষে দূরে চলে গেলো, মেয়েটাকে এভাবে বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু কি করার যাকে পাবো না তার সাথে সম্পর্ক এগিয়ে লাভ নেই, এতে ওই মেয়েটারো কষ্ট হবে আর আমারো।
আমি বিকালের দিকে ফ্লাটে চলে এলাম, বাসায় থাকলেই বেশি বেশি কষ্ট, আম্মুর চোখে আমি এখন একটা কুলাঙ্গার তাই বাসায় না থাকাটাই আমার জন্য এখন বেটার।

ফ্লাটে এসে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছি, ফোন বাজছে আমার কোনো খেয়ালই নেই।
কিছুক্ষন পর আবার ফোন বাজা শুরু করলো, আমি কিছুটা আনমনা হয়ে রইলাম, তার পরেই মনে হলো যে আমার ফোন বাজছে, আমি ফোন হাতে নিতেই দেখলাম রেদওয়ানের কল।
— এই আরফান তুই কি শুরু করেছিস বলতো? (রেদওয়ান)
— কই কি শুরু করেছি? দোস্ত শোন না মাইন্ড এর অবস্থা খারাপ তোকে একটু পরে ফোন দিই। (আমি)
— নাহ দেওয়া লাগবো না, তুই কত্তো বড়ো হারামী হুম, যে মাইয়াটা তোরে জীবন দিয়া ভালোবাসে তারে তুই এভাবে ধোঁকা দিতে পারলি।
— এই দোস্ত আমাকে বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ, আমি ধোঁকা দিতে চাইনি।
— কি বুঝবো হুম, কিচ্ছু বুঝার নাই এখানে।
— ভাই কথাটা শোন…
— আচ্ছা কি বলবি বল?
এবার আমি পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম।
এবার রেদওয়ান…
— দোস্ত মাইন্ড করিস নারে, আমার মাথা গরম হয়ে গেছিলো এসব শুনে। তা এটা কি জান্নাত জানে?
— না দোস্ত, একদম বলবি না, দেখ দোস্ত আমি জান্নাতের কাছে খারাপ হলে ও আমায় ভুল বুঝবে এবং ওর আব্বুর পছন্দ মতো পাত্রকে বিয়ে করতে রাজী হবে।
— তা বলে এভাবে তুই তোর ভালোবাসাকে হেরে যেতে দিবি।
আমি আর কান্না না থামাতে পেরে….
— দোস্ত কিচ্ছু করার নেই রে, আমার নসিবে শালা ভালোবাসা জিনিসটাই নেই যেটাই আমার লাইফের ইম্পোর্টেন্ট মনে হয় সেটা কেড়ে নেই আল্লাহ।
আমার এমন সিচুয়েসন বুঝে…
— এই নাঈম আমি যাচ্ছি তোর কাছে।
— আরে অনেক রাস্তা তো আসতে পারবি না।
— আরফান তুই আমার কলিজার দোস্ত, লাগবে তো ৩ ঘন্টা। এখন রাখি।(রেদওয়ান)
— আচ্ছা ভালো ভাবে আসিস।
— ওকে।
— টুট টুট টুট।

এবার ফোনটা রেখে দিলো রোমান। আমি এবার ফ্রেশ হয়ে মোবাইলে ফানি ভিডিও দেখছি যাতে মনটা একটু ফ্রী হয়, ভাইরে যে কষ্ট পেয়েছি তাতে কি আর এসব হাসির জিনিস দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। কিচ্ছু ভালো না লাগাতে আমি এবার বালিশে মাথা দিতেই আমার চোখে ঘুম জুড়িয়ে এলো, কারন একটা রাত আমার চোখে কোনো ঘুম নেই।
বাসার কলিংবেল বাজছে এটা শুনতে পেয়ে আমার ঘুম ভেঙে গেলো, ওই রোমান এসে গেছে। আমি চোখে মুখে পানী নিয়ে দরজা খুললাম দেখি…
— আরে দোস্ত আয় আয় ভেতরে আয়। (আমি)
— জ্বি তবে আর একজন যে আমার সাথে এসেছে তাকে ডাকবি না। (রেদওয়ান)
আমি দরজার সামনে গিয়ে…
— শালা এখনো মজা, কই কে এসেছে?
— সে নীচে দাঁড়িয়ে আছে।
— সে মানে?
— আরে বাবা যেই হোক যা ডেকে নিয়ে আয়।
— শালা কে সেটাও বলছিস না। আচ্ছা আমাদের কোনো ফ্রেন্ডজোন এর কেউ নাকি?
— হুম হতে পারে।
— শালা বলবি তো।
এটা বলে আমি সিড়ি দিয়ে নীচে কিছুটা নেমে যেতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম, ঐশী এখানে কি করে? যাই করুক তাতে আমার কি। আমি কোনোরকম কেয়ার না করে সাইড দিয়ে চলে যেতেই ঐশী আমাকে পিছন থেকে একটা পিঠে চাপড় দিয়ে…
— দেখতে পাচ্ছিস না আমি এখানে (ঐশী)
আমি এবার ঐশীর কাছে গিয়ে…
— তোকে আমি খুঁজতে আসিনি এসেছি আমার একটা ফ্রেন্ডকে। (আমি)
— এই শোন মাথা অনেক গরম আছে চুপচাপ আমায় কোলে তুলে উপরে নিয়ে চল।(ঐশী)
— কেন নিয়ে যাবো?
— কারন আমি রেদওয়ান এর সাথে এসেছি তাই।(ঐশী)
— ঐশী কেন পাগলামি করছিস আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না।
— তুই না করতে পারলেও আমি ঠিকি করতে পারবো।
— যেটা ভাববি সেটাই কর।
ঐশী এবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে…
— আরফান তুই আমায় কেন বিয়ে করতে চাস না সেটা আমি জেনে গেছি রে, কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস।
— কেন বিয়ে করবো না মানে আমি বিয়ে করতে চাই না ব্যাস শুধু এতোটুকুই। আর কষ্ট কেন পাবো এই হাসছি। হিহিহি
— আরফান তোমার মুখ দেখলে আমি বলে দেবো তুমি কিসের মধ্যে এখন আছো।
এটা বলে আমায় জড়িয়ে ধরে…
— আরফান আমাকে রেদওয়ান সবটা খুলে বলেছে, আমিও আজ আব্বুকে বলে এসেছি আমি যদি তোমায় না বিয়ে করতে পারি তাহলে আমি আর কাউকে বিয়ে করবো না।(ঐশী)
— তাই।(আমি)
এটা শুনে জানটা অনেক শান্তি পেলো।
— হুম।
— কিন্তু এতে তোমার আব্বু যে কষ্ট পাবে।
— নাহ কষ্ট পাবে না, কারোর খুশি ছিনিয়ে কেউ কষ্ট পাই না। আরফান আমি তোমার সাথে থাকতে চাই, তোমায় আপন করে পেতে চাই। প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না।
ঐশী এক একটা আমার সোজা আমার বুকে এসে লাগছে, এতোটাই খুশি হচ্ছি যে চোখের পানী থামাতে পারছিনা।
— এই পাগল কান্না করছো কেন? (ঐশী)
আমি সাথে সাথে চোখের পানী মুছে….
— কই না তো।(আমি)
— আমাকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে বললাম শোনা গেলো না।
— না, রুমে এখন রোমান আছে।
— ওহ।
এটা বলেই রেগে গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো, মেয়েটা অভিমান করেছে। তাই আমি জান্নাতকে এবার কোলে তুলে নিয়ে রুমে আসতেই….
— বাহ এই না হলে আমার দোস্ত। (রেদওয়ান)
— বুঝলাম না। (আমি)
— বুঝো নাই তো মুড়ি খাও।
ঐশী দেখি হাসছে,
ঐশী এবার হেসে হেসে…
— আরফান কিচেনটা কোথায়?
— ওই ওদিকে।
রেদওয়ান চিৎকার করে….
— ভাবী বিরিয়ানী চাই কিন্তু আজ।
— আচ্ছা দেবরজি।
আমি রেদওয়ানের হাত ধরে…
— দোস্ত ধন্যবাদরে। (আমি)
— কেন?(রেদওয়ান)
— ঐশীকে আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য।
— দূর বেটা, তুই আমার আপন ভাইয়ের থেকেও বেশি। তোর জন্য এতোটুকু করতেই পারি তাই না।
রাতে ডিনার সেরে রুমে এলাম, দেখি জান্নাত আমার রুমটা গুছাচ্ছে আর বলছে…
— এই পোলাটার জীবনেও কোনোদিন উন্নতি হইবো না, দেখো অবস্থা রুমে এতে ভূত থাকে না ও থাকে আল্লাহই জানে।
আরো বকবক করেই যাচ্ছে, আমাকে এখনো জান্নাত খেয়াল করেনি।
আমি আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম, এবার চিৎকার করে…
— ভূত ভূত ভূত।
এটা বলার সাথে সাথেই…
— আহ বাঁচাও বাঁচাও বাঁচাও।
আমি এবার হো হো করে হেসে উঠলাম, জান্নাত আমার বুকে কিল মেরে…
— উফ আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম এমন কেউ করে। (ঐশী)
— তাই নাকি, তা আমার নামে তো বেশ বকবক করছিলি আর করবি।(আমি)
— হুম একশো বার করবো। কেন করবো না? এখন থেকে তো আমাকেই সব খেয়াল রাখতে হবে এই রুম ওই রুম সব জায়গার।
— জ্বি রাখতে তো হবেই, এখন থেকে তুই তো আমার গিন্নি।
ঐশী আমার বাম গালটা টিপে…
— হুম আর তুমি কর্তা।
আমি শুয়ে আছি আর ঐশী সব গুছাচ্ছে, মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে…
— এই আসো না একটু হেল্প করো। (ঐশী)
— হেল্প সেটা কি
— আসবা নাকি
— পারবো না, ওরে বাবা ঘুম আসছে।
এটা বলে আমি চোখ বন্ধ করে রইলাম।
কিছুক্ষন পর ঐশী সব কাজ শেষ করে আমার পাশে বালিশে মাথা রাখার কিছুক্ষন পরেই আমি ওকে টার্চ করতেই….
ঐশী সাথে সাথে উঠে…
— ওই তোমার না ঘুম এসেছিলো এখনো জেগে কেন হুম(ঐশী)
— এসেছিলো তো, কিন্তু যার এতো সুন্দরি একটা হবু বৌ থাকে তার কি ঘুম আসে বলো।(আমি)
মন গলানোর ট্রাই আর কি
— থাক আর পাম দেওয়া লাগবে না। অনেক হইসে। ( ঐশী হেসেহেস)
— এই শোনো না।
ঐশীর আমার আরো কাছে এসে…
— হুম বলো..
— আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও।
— উম শিশু যেন, আমাকে তুমি ঘুম পাড়াও, এই আমি শুলাম।

এটা বলে আমার বুকের উপর মাথা রাখলো…
আহ মাথাটা রাখতেই এই দুদিনের কষ্ট কোনদিকে উড়ে গেলো। হার্টবির্টটা আস্তে আস্তে বাড়ছে। জান্নাতের সব চুল আমার পুরো মুখের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চুলের ঘ্রানে মাঝে মাঝে নিজেকে পাগল বলে মনে হচ্ছে। ঐশী এখনো ফিকফিক করে হাসছে…
— ওই হাসছিস কেন? (আমি)
— হুম হাসছি এই কারনে তুমি একটু পরেই দুষ্টামি আরম্ভ করে দিবা।(ঐশী)
— এই আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম দুষ্টামি করার কথা
— নাহ বাবু আজ কোনোরকম দুষ্টামি নই।
— আচ্ছা দুষ্টামি করব না তবে আজ শিশু হবো।
— ধুর পাগল একটা।
— পাগল তো সবার জন্য
— কিহহহ সবার জন্য মানে?
— আরে মিসটেক, তোর জন্য
— আরফান তুমি আমায় অনেক কষ্ট দিয়েছো জানো আমার কতো কষ্ট হইসে।
— বাবু আমি তো ইচ্ছা করে দেইনি, সরি বাবু।
— হুম জানি তো তাই বলে এতো কষ্ট এতো অবহেলা, এরপরে যদি কোনোদিন এমন করো না তোমায় মেরে ফেলবো।
— ওমা মেরে ফেললে কার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবি।
— তাহলে মারবো না, তোর কান ধরে উঠবস করাবো।
— তাই।
— হুম, আরফান একটা কথা দিবা
— হুম
— তুমি আমায় কথা দাও আমাদের মধ্যে যাইহোক না কেন কোনোদিন আমায় তুমি ছেড়ে যাবা না।
— হুম কথা দিলাম।
— আমার বাবুটা, i love you..
— love u too bbu
— আমার পাগলটা উম্মাম্মামামাম্মামামাম্মামামাহহহহহহ
— উম আমার পাগলিটা।
ঐশী জড়ো সড়ো হয়ে আমার বুকেতে মাথা রেখেছে, ওর একটা পা আমার পায়ের উপরে একটা হাত আমার মাথায়। পুরো একটা পিচ্চির মতো আমার উপরে শুয়ে আছে। মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর হিহি করে হাসছে আর লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছে।

নেক্সট পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন সবাই আগামীকালকে নেক্সট পর্ব দেওয়া হবে

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *